লাইফস্টাইল ডেস্ক : ওজন কমানোর জন্য আমরা কতকিছুই না করি। কেউ দিন শুরু করেন নিরামিষ খাবার দিয়ে, কেউ জিমে ঘাম ঝরান ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু অনেক সময় এসব প্রচেষ্টার পরও কাক্সিক্ষত ফল আসে না। অথচ প্রকৃতির কিছু সহজলভ্য উপাদান নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলেই ওজন কমানোর এই যাত্রা হতে পারে অনেক সহজ ও কার্যকর। তেমনই একটি উপকারি উপাদান হলো কাঁচা পেঁপে। বিশেষ করে এর জুস শরীরকে ভেতর থেকে ডিটক্স করে, হজমে সহায়তা করে ও বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে গতিময় করে তোলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে কাঁচা পেঁপের জুস আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে কার্যকর ভূমিকা।
ফাইবারে ভরপুর, ক্ষুধা কমায়
কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার। এই ফাইবার হজমে সাহায্য করে, একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে অযথা খাওয়া বা অতিরিক্ত ক্ষুধার অনুভূতি অনেকটাই কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খান, তাদের ওজন কমানোর হার তুলনামূলক বেশি।
হার্ভার্ড টি. এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন পর্যাপ্ত ফাইবার গ্রহণ করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করে।
হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কাঁচা পেঁপেতে থাকে পাপাইন নামক এক শক্তিশালী হজম এনজাইম, যা খাবারের প্রোটিন ভেঙে ফেলে সহজে হজমে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য কাঁচা পেঁপের জুস এক প্রাকৃতিক ও নিরাপদ সমাধান হতে পারে।
২০২৩ সালের একটি গবেষণায় (জার্নাল অব মেডিসিনাল প্ল্যান্টস স্টাডিজ) দেখা গেছে, পেঁপেতে থাকা পাপাইন ও চিমোপাপাইন হজমে সহায়ক ও অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে।
শরীর ডিটক্স করে ও বিপাক বাড়ায়
কাঁচা পেঁপের জুস শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেমন ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন এবং ফেনলিক যৌগ শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। ফলে বিপাকক্রিয়া সক্রিয় হয়, ওজন কমে দ্রুত। ইউএসডিএ ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডেটাবেস অনুসারে, কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীর ডিটক্সে সহায়ক।
যেহেতু কাঁচা পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম (প্রায় ১১০ গ্রামে মাত্র ৪৩ ক্যালোরি), তাই এটি ওজন কমাতে চাইলে এক আদর্শ খাবার হতে পারে। একদিকে এটি পেট ভরিয়ে রাখে, অন্যদিকে শরীরকে পুষ্টি দেয়, যেমন- ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’, ফোলেট, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম। ইউএসডিএ নিউট্রিয়েন্ট ডেটা ল্যাবরেটরি অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রায় ৮৮% পানি, যা শরীর হাইড্রেটেড রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সহায়তা করে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা পেঁপেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ট্রপিক্যাল বায়োমেডিসিন এর একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, পেঁপের নির্যাস টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সহায়ক।
এবার জেনে নিন কাঁচা পেঁপের জুস তৈরির পদ্ধতি-
উপকরণ
১. আধা কাপ খোসা ছাড়ানো ও কুচানো কাঁচা পেঁপে
২. এক গ্লাস ঠান্ডা পানি
৩. এক চিমটি গোলমরিচ গুঁড়ো (ঐচ্ছিক)
৪. লেবুর রস এক চা-চামচ
৫. সামান্য মধু (যদি স্বাদে ভারসাম্য আনতে চান)
পদ্ধতি
সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে ছেঁকে নিতে পারেন। সকালে খালি পেটে বা দুপুরে খাবারের আগে পান করলে সবচেয়ে ভালো ফল মিলবে।
সতর্কতা
গর্ভবতী নারীদের কাঁচা পেঁপে বা এর রস পরিহার করা উচিত। কারণ এতে ইউটেরাইন সংকোচন ঘটাতে পারে এমন এনজাইম রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে ডায়রিয়া বা অম্বল হতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় পান করা ভালো।