মোঃ মোস্তফা : মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের হাজী বাজার থেকে মোল্লার চর হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে উঠার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নির্মাণাধীন বক্স কালভার্টকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। দীর্ঘ ২৮ বছর পর এই সড়কে আধুনিক কাঠামোর ৩৬ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট প্রশস্ত কালভার্ট নির্মাণ শুরু হলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে চরম অসন্তোষে রয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন এমপি সাগুফতা ইয়াসমিনের উদ্যোগে নির্মিত পুরনো কালভার্টটি বহুদিন ধরেই ছিল জরাজীর্ণ। বর্ষা মৌসুমে হাঁটু পানি পেরিয়ে যাতায়াত করতেন হাজারো মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, এমনকি ফসল আনা-নেওয়ার প্রধান পথ হিসেবে সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি।
অবশেষে স্থানীয়দের দাবির মুখে নতুন প্রকল্প গ্রহণ হয়। প্রায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে শুরু হয় নতুন কালভার্টের নির্মাণ। বাস্তবায়নে দায়িত্ব পায় সিরাজদিখান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় এবং নির্মাণে মাদারীপুরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম এস শাহ মাদার ইন্টারন্যাশনাল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, নির্মাণকাজে মান নিয়ন্ত্রণের চরম ঘাটতি রয়েছে। তারা জানান, কালভার্টের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। ব্যবহার করা হচ্ছে সস্তা ও নিম্নমানের রড, কংক্রিটের মিশ্রণেও অনিয়ম স্পষ্ট। কোথাও কোথাও হাতের জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে দেড় মাস আগে কাজ বন্ধ করে দেন।
তাদের মতে, এখনই প্রতিবাদ না করলে আগামী বর্ষায় এই কালভার্ট ধসে যেতে পারে। আবারও তারা বছরের পর বছর দুর্ভোগে পড়বেন।
সিরাজদিখান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তারা ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন। তা না হলে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে কাজ করানো হবে। ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেনকে অফিসে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহ মাদার ইন্টারন্যাশনাল এর কর্ণধার মোজাম্মেল হোসেন স্বীকার করেছেন কিছু গাফিলতির কথা।
তিনি বলেন, কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিছু ত্রুটি হয়েছে, তবে আমরা সেটা ঠিক করে নেব।
তবে এলাকাবাসীর শঙ্কা- এ ধরনের আশ্বাস অতীতেও বহুবার পাওয়া গেছে, বাস্তবে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
মোল্লার চর সংলগ্ন হাজী বাজার সংযোগ সড়ক শুধু স্থানীয় জনগণের নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষেরও প্রধান চলাচলের মাধ্যম। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুলগামী শত শত শিক্ষার্থী, কৃষক ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার নিচু অংশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এবং কালভার্ট না থাকলে পুরো অঞ্চল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ ধরনের স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নই হতে পারে গ্রামের মানুষের ভরসার জায়গা। দুর্নীতি বা অনিয়মের মাধ্যমে যেকোনো অবকাঠামো প্রকল্প শুধু টাকা নয়, ভেঙে দেয় মানুষের আস্থা, উন্নয়নের স্বপ্ন।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত এবং কতটা আন্তরিকভাবে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে।