নিজস্ব প্রতিবেদক
দিন যত যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল শুক্রবার ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে জেলায় নতুন করে একজন নার্সসহ ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ জনে। আর এদের মধ্যে মারা গেছে ৪ জন। এদিন ১২টায় মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একদিনের ব্যবধানে জেলায় ১৩ জন আক্রান্তের ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জেলাবাসীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তাহলে কোন পথে এগুচ্ছে মুন্সীগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি? এদিকে একটি জরিপে দেখা গেছে দেশের করোনা সংক্রমিত জেলাগুলোর মধ্যে ৫ম অবস্থানে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ।
এ বিষয়ে কথা হলে মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। তার পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলা। এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাব অবশ্যই পড়বে। মুন্সীগঞ্জে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ থেকে সংক্রামিত হয়েছে। এখনো শোনা যাচ্ছে প্রচুর পরিমানে গোপনে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জে আসছে। এতে অবস্থা আরো নাজুক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। তাই এই মুহুর্তে সকলের উচিত প্রতিরোধ তৈরি করা এবং ঘরে থাকা। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, যেহেতু করোনার এখনো কোন প্রতিকার বের হয়নি তাই পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হয় তা এখনো বলা যায় না। নরসিংদীর অবস্থা প্রথম দিকে ভালো থাকলেও গত কয়েকদিনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক গুণে বেড়ে চলেছে। এখন সময়ই বলে দিবে পরিস্থিতি কি হয়। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সাধ্যমত প্রস্তুতি রয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, গত ১৬ এপ্রিল জেলা থেকে ৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে ১৫ এপ্রিল যেসব নমুনা পাঠানো হয়েছিলো তাদের মধ্যে থেকে ২ জনের এবং মুন্সীগঞ্জের একজন সরাসরি ঢাকাতে নমুনা পরীক্ষা করলে তার করোনা শনাক্ত হয়। আর জেলায় এখনো পর্যন্ত সর্বমোট ২৪৫ জনের নমুনা পাঠানো হয়।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় মানিকপুর এলাকায় ১৯ বছরের এক তরুনী, মুক্তারপুরে ৫৪ বছরের এক নারী ও বিনোদপুর এলাকায় ৪৫ বছরের এক পুরুষ রয়েছে। টঙ্গীবাড়ীতে ধামারণ এলাকার এক পুরুষ (৩৭), লৌহজংয়ে ২ জনের মধ্যে নাগেরহাট এলাকার পুরুষ (৩৫) ও কলমা গোড়াকান্দা এলাকার এক পুরুষ (৪৫)। সিরাজদিখানে ৩ জনের মধ্যে আবিরপাড়া এলাকার এক তরুনী (২০), ইছাপুরা ও ইসলামপুর এলাকার দুজন পুরুষ (৫০) ও ৪০। গজারিয়ায় উপজেলায় ১ জন নার্স (৫০)। শ্রীনগর উপজেলায় গোল্ডেন সিটি এলাকার পুরুষ (৩৫) তার স্ত্রী (২৫) এবং ফৈনপুর এলাকার নারী (২৫)।
অর্থাৎ এ নিয়ে সদর উপজেলায় মোট ৬ জন, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ৮ জন, গজারিয়া উপজেলায় ৮ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় ৬ জন, লৌহজংয়ে ৫ জন ও শ্রীনগরে এ পর্যন্ত ৪ জনের করোনা শনাক্ত হলো।
এদিকে মুন্সীগঞ্জে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। অপর একজন রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
উল্লেখ্য গত ১১ এপ্রিল সর্বপ্রথম ২ নারী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মুন্সীগঞ্জে ১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। একইদিন মুন্সীগঞ্জে জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার।