নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পঞ্চম দফায় ছুটি বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার। এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ছুটি বাড়ানোর ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমবেশি সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই ছুটি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ফের ভাবা হচ্ছে। তবে সবদিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী ছুটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বলেন, ছুটি বাড়ানোর বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে। এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। প্রস্তাবনাটি চূড়ান্ত হলে তার সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
সূত্র আরও জানায়, ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি চলতি বোরো মওসুমের কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। হাওর অঞ্চলসহ যেসব এলাকায় বোরোর আবাদ হয় সেখানে ধানকাটার শ্রমিকদের যাতায়াতের বিষয়টিও চিন্তা করতে হচ্ছে। তাই এবার ছুটি বাড়ানো হলেও এ ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা থাকতে পারে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসূফ হারুন বলেন, ‘ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রয়োজনে ছুটি বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ছুটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখা। করোনা প্রতিরোধে এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে আইসোলেশন এবং সোস্যাল ডিসটেন্স মেইনটেন করা। পাশাপাশি যাদের বের না হলেই নয়, যেমন ধান কাটার শ্রমিক। হাওর অঞ্চলে যেসব জায়গায় বোরোর উৎপাদন বেশি হয় তাদের সেসব জায়গায় যেতে হবে। সেই বিষয়টি নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’
এর আগে গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চলছে। পাশাপাশি জনগণের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ নির্দেশনাও জারি করেছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত পথে বের হওয়া যাবে না। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই সময়ে কাউকে বাইরে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে প্রথমে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে তা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লম্বা করা হয়। এবং সর্বশেষ ১২ ও ১৩ তারিখকে সাধারণ ছুটির আওতায় এনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল ছিল বাংলা নববর্ষের ছুটি। পরে সাধারণ ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ১৫ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত লম্বা হয় সরকারি ছুটি।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ছুটির মধ্যেও জরুরি পরিষেবা অর্থাৎ বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি খাতের কার্যক্রম চলবে।
এছাড়া কৃষি পণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, জরুরি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল এ ছুটির আওতায় পড়বে না।
জরুরি প্রয়োজনে অফিস খোলা রাখা যাবে। প্রয়োজনে ওষুধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো চালু রাখতে পারবে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অব্যাহত থাকবে।