বিশেষ প্রতিবেদক
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ^জুড়েই জ¦ালানি তেলের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় দামও আশাতীতভাবে কমে গেছে। এ অবস্থায় দেশেও জ¦ালানি তেলের চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ডিপোগুলোয় এখন যথেষ্ট পরিমাণ জ¦ালানি তেল মজুদ রয়েছে। ফলে বিশ^বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেলেও সীমিত ধারণ ক্ষমতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে আশানুরূপ মজুদ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপিসি ইতিমধ্যে আমদানিকৃত জ¦ালানি তেল মজুদ করতেই হিমশিম খাচ্ছে। কারণ যথাসময়ে জাহাজ থেকে জ¦ালানি তেল খালাস না করলে বিপিসিকে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিপিসি বেসরকারি জ্বালানি পরিশোধন প্রতিষ্ঠানের ট্যাংকার ও ফিলিং স্টেশনে ভাড়ায় তেল মজুদ রাখার পরিকল্পনা করছে। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান (পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা) প্রতিদিন ১৬ হাজার টন ডিজেল বিক্রি করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে সারা দেশে একমাস ধরে চলমান সাধারণ ছুটির কারণে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৭ হাজার টন ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ডিজেলের বিক্রি কমেছে ৫৩ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে বিপিসির জ্বালানি বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ। তাছাড়া জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের মজুদ সক্ষমতার চেয়েও বেশি খালাস হওয়ায় সংস্থাটি বিপাকে পড়েছে। জেট ফুয়েলের বিক্রি প্রায় শতভাগ কমে যাওয়ায় উদ্বৃত্ত জেট ফুয়েলে জাহাজ থেকে খালাসের পর ফ্লোটিং অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ার আগেই প্রায় দুইমাস ধরে আমদানীকৃত জ্বালানিবাহী ৫টি জাহাজ দেশে এসে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত ধারণ ক্ষমতার মজুদ ব্যবস্থায় বিপাকে পড়েছে বিপিসি।
সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সরবরাহজনিত কারণে বিপিসির ডিজেলের মজুদ কমে যায়। সঙ্কট উত্তরণে তখন বিপিসি ডিজেলসহ প্রয়োজনীয় জ্বালানির আমদানি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গত একমাস ধরে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত দুর্যোগে চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন উল্টো মজুদ সঙ্কটে পড়েছে বিপিসি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের কনডেনসেট পরিশোধনকারী বেসরকারি ৯টি রিফাইনারিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপিসি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর ট্যাংকারের মজুদ সক্ষমতার তথ্য ও মাসিক ভিত্তিতে টন প্রতি জ্বালানি মজুদের ভাড়া দর চাওয়া হয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বিপিসির প্রস্তাবে অনীহা দেখালেও ইউনাইটেড পাওয়ার, সুপার রিফাইনারি, মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স লিমিটেড, সিনথেটিক রেজিন লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মাসিক ভিত্তিতে ট্যাংকার ভাড়া দিতে সম্মত হয়েছে। বেসরকারি ওসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে উদ্বৃত্ত জ্বালানি মজুদের বিষয়ে বিপিসি একটি আপদকালীন কমিটিও করেছে।
সূত্র আরো জানায়, গত মার্চে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি জ্বালানিবাহী জাহাজ এসেছে। এপ্রিলে এসেছে ৩টি জাহাজ। প্রতিটি জাহাজে ৩০ হাজার টন করে প্রায় দেড় লাখ টন জ্বালানি রয়েছে। তার মধ্যে মার্চে আসা জাহাজ দুটি চুক্তির শর্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী আসতে পারেনি। ফলে খালাসে বিলম্ব হলেও মার্চের ওই দুটি জাহাজের জন্য জরিমানা দেবে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এপ্রিলে আসা ৩টি জাহাজ চুক্তির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য নিয়ে আসায় ওই ৩টি জাহাজকে খালাসে প্রস্তুত হওয়ার ১০৮ ঘণ্টা পর থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে দৈনিক (২৪ ঘণ্টায়) প্রায় ১০ লাখ টাকা হারে জরিমানা গুনতে হবে। ফলে যে কোনো উপায়ে জ্বালানি খালাস করা না গেলে প্রতিদিন বিপিসিকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। সেজন্য যে কোনো উপায়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ট্যাংকারে হলেও জ্বালানি মজুদের চেষ্টা করছে বিপিসি। বিপিসির ডিজেল মজুদ সক্ষমতা রয়েছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৯২ টন। তার মধ্যে ২২ এপ্রিলের হিসাবে ডিপোতে মজুদ রয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪৪৯ টন। কেরোসিনের মজুদ সক্ষমতা ৪৩ হাজার ২৫৩ টনের বিপরীতে মজুদ রয়েছে ২৯ হাজার ৩৮৮ টন। পেট্রোলের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ১৪৩ টনের বিপরীতে মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৯২ টন। বিপিসির অকটেন ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজার ৩৪৪ টন, এর বিপরীতে মজুদ রয়েছে ২৫ হাজার ৭৫৬ টন। ফার্নেস অয়েলের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৪০ টন। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৩ টন। জেট ফুয়েলের মজুদ সক্ষমতা ৬৫ হাজার ৮৫৮ টন, বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৭০ হাজার ১৬৫ টন।