নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামীকাল সোমবার মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ইউনিয়নটিতে ইভিএমের মাধ্যমে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন ইউনিয়নটির ভোটাররা। ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে এ নির্বাচনকে ঘিরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আলোচনায় উঠে এসেছে সুমন হালদারের নৌকা আর সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহমেদের মোটরসাইকেল।
জানা যায়, ১২ হাজার ৪শত ৮ জন ভোটারের এই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে ইউনিয়নবাসী ঐতিহ্যগতভাবেই উত্তরে-দক্ষিণে বিভক্ত। রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা ব্যক্তিগত যোগ্যতার বাইরে ইউনিয়নের বড় অংশ ভোটার এই বিভাজনের ভিত্তিতে ভোট দেন।
৪ হাজার ২শত ১০ ভোটের উত্তরের তিন ওয়ার্ডে প্রার্থী চারজন। দুইজন বিএনপির বিদ্রোহী, একজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আর একজন ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের। উত্তরের চার প্রার্থীর মধ্যে মূল আলোচনায় আছেন তিনজন। এর মধ্যে সর্বশেষ জরিপে এগিয়ে আছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহমেদ সাহেবের মোটরসাইকেল। উত্তরের ভোটাররা যদি নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মোটরসাইকেলের সাথে যোগ দেন আর কট্টর নৌকা বিরোধীরা যদি নৌকা ঠেকাতে আলী আহমেদের মোটরসাইকেলে ওঠেন, তাহলে আগামীকাল পাঁচগাঁও ইউনিয়নে জলপথের নৌকার সাথে স্থলপথের মোটরসাইকেলের লড়াই জমে উঠবে বলে সকলের ধারণা।
মাঝখানের ৩নং ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী। ঐতিহ্যগতভাবেই চাঠাতিপাড়া গ্রামের ভোটাররা নিজ গ্রামের প্রার্থীকে ভোট দেন এবং সাধারণত অন্য গ্রামের ভোটাররা চাঠাতিপাড়ার প্রার্থীকে ভোট দেন না। চাঠাতিপাড়া গ্রামের বেশিরভাগ ভোটার দেশের বাইরে থাকায় এই প্রার্থী গ্রামের বাইরে কোন আলোচনায়ই নেই।
৭ হাজার ১শত ৫১ ভোটের দক্ষিণের পাঁচ ওয়ার্ডে প্রার্থী তিনজন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মিলেনুর রহমান নানা বিতর্কিত কাজের জন্য প্রথম থেকেই জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন। সময় গড়িয়ে তার চশমার ভোট এখন শুন্যের কোঠায়। আরেক আওয়ামী লীগের হাইব্রিড ও বিদ্রোহী প্রার্থী মিজান (মিজ্জল) মোল্লা অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তার অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। চারদিন আগে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই মিজ্জল মোল্লার সাথে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে ছেড়ে নৌকায় ওঠা শুরু করেন। অন্যদিকে তার ছত্রছায়ায় থেকে যারা রাতের বেলায় বিএনপির দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতেন, তারাও এখন অটোরিকশার সাথে নেই বলে অনেকে জানিয়েছেন। গত দুইদিনের সরেজমিনের জরিপে মিজ্জল মোল্লার অটোরিকশার ভোট গোটা ইউনিয়নে সাত শয়ের নিচে নেমে এসেছে বলে পাঁচগাঁও, দশত্তোর এলাকার বহু লোক জানিয়েছেন।
অপরদিকে নৌকার প্রার্থী সুমন হালদার গত চারদিনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীর সক্রিয় সহযোগিতায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে এসেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ভোটাররা যদি নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে মিজ্জল মোল্লার অটোরিকশা ত্যাগ করে সুমন হালদারের নৌকায় ওঠেন তাহলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলে ধারণা করা যায়।
উল্লেখ্য, এই ইউনিয়নটির সীমানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন নির্বাচন বন্ধ থাকার পর হাইকোর্টের আদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উপজেলার মধ্যে এককভাবে এখানে নির্বাচন হচ্ছে। ইউনিয়নটিতে ৩টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের বিপরীতে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। আর ৯টি ওয়ার্ডের মেম্বার পদে ৩৫ জন প্রার্থী নিজ নিজ প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার এম.কে আহমেদ জানান, ইউনিয়নটিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। ইউনিয়নটিতে ৯টি ওয়ার্ডে ১০টি ভোটকেন্দ্র। ১নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা বেশি থাকায় সেখানে ২টি ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান পদে ১০, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০ ও ওয়ার্ড মেম্বার পদে ৩৫ জনসহ মোট ৫৫ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রাতদিন নিজের জন্য ভোট চেয়ে ঘুরছেন।