নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মাঠ জুড়েই ভুট্টা গাছের চারা। কচি সবুজ চারাগুলো কিছুটা বিবর্ণ, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এ দৃশ্য। ভাল ফলনের জন্য এক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায় কৃষকের হাহাকার। গজারিয়া উপজেলায় প্রাণী ও মাছের খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানী থাকায় ক্রমশ ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে সাধারণ কৃষক। সামগ্রিকভাবেই দেশে প্রতিবছর প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। এতে ভুট্টার একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। চাহিদা থাকায় চাষ বাড়ছে। ফলনেও সাফল্য এসেছে। ইতিমধ্যে ভুট্টা চাষে কম সময়েই সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যান্য খাদ্যশস্যের চেয়ে কম পরিচর্যা ও কম সেচ খরচে ভালো ফলন হয় এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে ভুট্টা চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ছে। মাত্র পাঁচ বছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলনেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে রয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের রসুলপুর, ইমামপুর, করিম খাঁ, হোগলাকান্দী, বাঘাইকান্দী, ষোলআনী, ভবেরচর ইউনিয়নের আলীপুরা, পৈক্ষারপাড়, চরপাথালিয়া, আনারপুরা, টেঙ্গারচর ইউনিয়নের টেঙ্গারচর, বৈদ্যারগাঁও, উত্তর শাহপুর, মিরেরগাঁও, মিরপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের ফুলদীসহ, গুয়াগাছিয়া, বাউশিয়া ইউনিয়নের অনেক গ্রামের মাঠগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, মাঠে ভুট্টা গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুট্টা চাষের অধিকাংশ জমিগুলোতে আলু চাষ হয়ে থাকে। আলু উত্তোলন করে তারা ভুট্টার বীজ রোপণ করেন। বিগত বছরগুলোতে এই সময়টাতে বৃষ্টি হয়। সেজন্য সেচের প্রয়োজন পড়ে না। তাই সেচের ব্যবস্থাও নেই। আলীপুরা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, এবার ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। কয়েক বছর ধরে ভুট্টায় বিঘা প্রতি খরচের সমান মুনাফা হয়েছে। এ কারণে ভুট্টার আবাদে ঝুঁকছেন তিনি। তবে অনাবৃষ্টির কারণে ভাল ফলন নিয়ে আশঙ্কায় আছেন। ইতিমধ্যে বৃষ্টির জন্য গজারিয়ার বিভিন্ন গ্রামে ‘ইসতিসকার নামাজ’ আদায় করেছেন।
গজারিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, দেশে গ্রীষ্ম ও শীত – এ দুই মৌসুমে ভুট্টা চাষ হয়। তবে মোট উৎপাদনের ৮৭ শতাংশই হয় শীত মৌসুমে। এলাকাভেদে ফলন ওঠে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত। এবার উপজেলার ১৫৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। অধিকাংশই উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্যাসিফিক ২৭৬০, সুপারসাইন, এনকে-৪০, প্যাসিফিক ৯৯৯। গত বছর গজারিয়াতে হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে পৌনে ১০ টন ভুট্টা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ তৌফিক আহমেদ নূর বলেন, অনাবৃষ্টি আর গরমে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এতে চারার ক্ষতি হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের দরকার।