নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুমহান আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উন্নত-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন-সাধ বাস্তবায়নে সকলকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসÑ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি। ১৯৭২ সালের এই দিনে হানাদার পাকিস্তানের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অপচেষ্টার জাল ছিন্ন করে পাকিস্তানের জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবঙ্গু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ-পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার আহ্বান এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা অতঃপর স্বাধীনতা ঘোষণার দায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে আটক করে পাকিস্তানের জেলখানায় বন্দি করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করলেও তার পূর্বেই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের সকল পরিকল্পনা ও যথাসম্ভব প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শুরু হয় সর্বাত্মক সশস্ত্র মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে বাঙালি জাতি- ঘরে ঘরে গড়ে ওঠে শক্তিশালী দুর্গ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এইচ এম কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীর নেতৃত্বাধীন প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্থন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাঙালি জাতির কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। কিন্তু তখনো মহাবিজয়ের মহানায়ক স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি।
তিনি বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করলেও পরিপূর্ণ বিজয় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠতে পারেনি বাঙালি জাতি। তখনও বাংলার আকাশে উদিত প্রত্যুষের প্রভাকর কুয়াশাচ্ছন্ন, মেঘাবৃত; বাঙালির ঠোঁটে লেগে থাকা বিজয়োল্লাসে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আশঙ্কা আর শূন্যতার আস্তরণ। মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনও পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দি। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের সামরিক ট্রাইব্যুনাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার রায় ঘোষণা করে। রায় কার্যকর করতে লায়ালপুর জেল থেকে বঙ্গবন্ধুকে মিয়ানওয়ালি জেলে স্থানান্তরিত করা হয় এবং তারই চোখের সামনে যুদ্ধবন্দিদের দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্য কবর খোঁড়া হয়। ফাঁসির মঞ্চের সম্মুখে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন অটল-আপোসহীন দৃঢ়প্রত্যয়ী; বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য চূড়ান্ত আত্মত্যাগে প্রতীজ্ঞ।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের চৌদ্দটি বছর পাকিস্তানের জেলখানার অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দি থেকেছেন এবং দুইবার ফাঁসির মুখোমুখি হয়েছেন। শত প্রতিকূলতা বিপদ অন্যায়-অত্যাচার স্বীকার করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু হিমালয় সম আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণ। সাড়ে সাত কোটি জনতার সংগ্রামী দাবী, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারত সরকার আর বিবেকবান বিশ্বের মৃত্যুঞ্জয়ী অভিপ্রায়ের প্রচন্ড চাপে ১০ জানুয়ারি ইয়াহিয়া-ভুট্টোর কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন বাঙালির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৮ জানুয়ারি বিবিসিতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর প্রচারিত হলে জনতার প্রাণোচ্ছ্বলতায় পরিপূর্ণ বিজয় আভায় আলোকিত হয়ে ওঠে স্বাধীনতার স্বর্ণ-সূর্য। বাংলার দশ-দিগন্তে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে সংগ্রামী গণশক্তির চূড়ান্ত বিজয়ের তুর্যনাদ। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত বাংলায় নেমে আসে পরমানন্দ আর দুর্লভ তৃপ্তির বাঁধ-ভাঙ্গা জোয়ার। গ্রাম-বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ ছুটে আসতে শুরু করে রাজধানীর পথে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ বিজয় এনে দিয়েছিল। কারণ পাকিস্তানী জান্তা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের কম চেষ্টা করেনি।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। যার মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবার শক্তিশালী কাঠামো বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং শূন্য কোষাগার নিয়ে যাত্রা শুরু করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র পুনর্গঠনসহ শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়। সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্নকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রগতির অব্যাহত ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুমহান আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উন্নত-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন-সাধ বাস্তবায়নে সকলকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।