নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সাংবাদিক, কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক আনোয়ার হোসেন আনু ওরফে আনমনা আনোয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল)। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘আনমনা প্রাঙ্গণের’ পক্ষ থেকে মসজিদে মসজিদে দোয়া, ইমাম ও দরিদ্রদের মাঝে করোনা সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে। দেশে মহামারী করোনা থাকায় কোন অনুষ্ঠান করছে না আনমনা আনোয়ারের বর্র্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ধরে রাখার জন্য গঠিত সংগঠন ‘আনমনা প্রাঙ্গণ’।
আনমনা আনোয়ার ছিলেন মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য। ‘অচলায়তনের মুখোশ পরা সচল মানুষ আমি, নিজেকে ভাঙছি আর জানছি, মানুষ হওয়া অতো সোজা নয়- এমন সব কবিতা লিখেছেন তিনি। তিনি ছিলেন মূলত প্রেম ও দ্রোহের কবি। তিনি কোন কবিতা পান্ডুলিপি করেননি। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন এবং স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে অসংখ্য কবিতা ছাপা হয়েছে তার। তিনি অধিকাংশ কবিতা তার ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। সৃজনশীল মানুষদের ম্যাসেঞ্জারে দিতেন। তিনি ছিলেন মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন থিয়েটার সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি। নিজের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন কালের ছবি। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এতোকিছুর পরও তিনি কখনো নিজেকে একজন সাংবাদিক, কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী বা সংগঠক হিসেবে পরিচয় দেননি। নিজের সংগঠনের বাইরের অন্যান্য সংগঠনকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। তার কাছের মানুষগুলোর বিপদে শারীরিক ও আর্থিকভাবে এগিয়ে গেছেন সবসময়। এলাকার বহু অস্বচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আর্থিক সহায়তা করে। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস পৌঁছে দিতেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই মানুষটি মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে গত ২৮ এপ্রিল ভোরে কক্সবাজারের একটি হোটেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। শহর লাগোয়া নয়াগাঁও গ্রামের প্রয়াত আবুল মেম্বার তার বাবা। বর্তমানে শহরের মানিকপুর গ্রামে তাদের বসবাস।
আনমনা প্রাঙ্গণের উপদেষ্টা ও পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আনু ছিলো আমার দীর্ঘ চলার সাথী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে চলেছি। সেই বন্ধুকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। এখন আনুর স্মৃতিকে আনমনা প্রাঙ্গণের মাধ্যমে ধরে রাখবো। করোনাসহ দেশের দুর্যোগে এবং অসহায় মানুষের পাশে থেকে সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড আমরা চালিয়ে যাবো।
তিনি আরো বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে, ব্যক্তিগত একজন মানুষ হিসেবে ও আনমনা প্রাঙ্গণের মাধ্যমে করোনায় অভুক্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা করে যাচ্ছি এবং করে যাবো। আপনারা সবাই ঘরে থাকুন, কেউ বের হবেন না।
আনমনা প্রাঙ্গণের সভাপতি সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন সজল বলেন, দেশে মহামারী থাকায় আমরা আনমনা প্রাঙ্গণের পক্ষ থেকে কোন আলোচনা বা স্মরণসভা করতে পারছি না। করোনায় মসজিদে মুসল্লি কমে যাওয়ায় ইমামদের আয়ের পথ কমে গেছে। তাদের মাসিক বেতনও অনিশ্চিত। অনেক ইমাম তার পরিবার অন্য জেলায় রাখেন। সেদিকটি বিবেচনা করে মানবিক সহায়তা হিসেবে তাদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া মসজিদে মসজিদে দোয়া ও গরীবদের মাঝেও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।
আনমনা প্রাঙ্গণের সাধারণ সম্পাদক ডালিম রহমান বলেন, কবি, সাহিত্যিক ও দক্ষ সংগঠক আনমনা আনোয়ার আনু ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো চেষ্টা করবো তার মতো করেই সবার সামনে উপস্থাপন করতে।
আনু ভাইয়ের বন্ধু, সহপাঠি ও শুভানুধ্যায়ীদের সাথে নিয়েই আনমনা প্রাঙ্গণ এই মহামারীতেও অসহায়দের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, আপনারাও আমাদের সাথে থাকবেন, মৃত্যু দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জে প্রয়াত সাংবাদিক, কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক আনোয়ার হোসেন আনু ওরফে আনমনা আনোয়ারের কর্মময় জীবন ধরে রাখার জন্য গত ১৮ই মার্চ ‘আনমনা প্রাঙ্গণ’ নামে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়।