আরাফাত রায়হান সাকিব॥ পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশি মুদ্রা অর্জন করায় বাংলাদেশে পাটকে বলা হয় সোনালী আঁশ। পদ্মা,মেঘনা সহ বিভিন্ন নদী ও খাল বেষ্টিত মুন্সীগঞ্জ জেলা একসময় প্রচুর পাট উৎপাদন হতো। প্রতিবছর জেলায় উৎপাদিত পাটের বেশিরভাগই বিক্রি হতো পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জের বাজারে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরেই জেলায় পাটের আবাদ ও উৎপাদন কমেই চলেছে। ভরাটের ফলে কৃষি জমি কমে আসা, প্রতিকুল আবহাওয়া ও কৃষকদের লাভ কম হওয়া সহ নানা কারনেই জেলায় পাটের আবাদ ও উৎপাদন কমে আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০১৮-১৯অর্থ বছরে জেলা পাটের আবাদ হয়েছে ৩হাজার ৪শ ৪২হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২৯হাজার ৫শ ২১ বেল বা ৫হাজার ৫শ ৮মেট্রিক টন। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থ বছওে পাটের আবাদ হয়েছিলো ৪হাজার ২শ ৯৮হেক্টর জমিতে। সেবছর পাট উৎপাদন হয়েছে ৬হাজার ৩শ ৬৪মেট্রিক টন ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় মুন্সীগঞ্জে দেশী ও তোষা দুই ধরনের পাটই উৎপাদন হয়ে থাকে। জেলায় দেশী প্রজাতির মধ্যে সিবিএল-১, সিবিই-৩, ডি-১৫৪ এবং তোষা প্রজাতির মধ্যে ‘ওএমওয়ান’, ০৯৮৯৭ ও ০৭৯৫ প্রজাতির পাট উৎপাদন হয়। ২০১৮-১৯অর্থ বছরে জেলায় দেশী পাট উৎপাদন হয় ২হাজার ৩শ ১৬ দশমিক ৮ মেট্রিক টন, তোষা পাট উৎপাদন হয় ৩হাজার ১শ ৯১ দশমিক ৮৭মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশি ২হাজার ৪শ ৮৭দশমিক ৮৭মেট্রিক টন ও তোষা ৩হাজার ৩শ৭৬ দশমিক ৯৯মেট্রিক টন।
তবে জেলার সবচেয়ে বেশি পাট উপৎপাদনকারী উপজেলা সিরাজদিখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে পাটের আবাদ কমলেও এবছর আবাদ কিছুটা বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০২০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। পর্যায়ক্রমে ২০১৭-১৮অর্থবছরে ১৮৬০ হেক্টর, ২০১৮-১৯অর্থবছরে ১৬৯০হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। এবছর কিছুটা বেড়ে ১৭৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পাটের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খোরশেদ আলম দেওয়ান দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজকে জানায়, লাভ কম হওয়ায় কৃষকরা অন্য ফসল আবাদ করছে। কৃষকরা আবাদ কম করায় উৎপাদন ও কমছে। এছাড়া আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে পাটের উৎপাদন কম বেশি হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়ায় পাটের উৎপাদন যেমন বাড়ে তেমনি প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে। কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলার অনেক স্থানে জমি ভরাট করার কারনে উৎপাদন কমে আসছে পাটের।
এদিকে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একই সাথে উৎপাদন কষ্টসাধ্য ও খরচের চেয়ে লাভ কম হওয়ায় পাট থেকে বিমুখ হচ্ছে তারা।