আক্রান্ত-১০ জন, জেলা লকডাউন!
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর অবাধ বিস্তার বেড়েই চলেছে। এরমধ্যেই মুন্সীগঞ্জে প্রথমবারের মত গতকাল শনিবার করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন জেলার ৫টি উপজেলায় ১০ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এদিকে এরমধ্যেই মুন্সীগঞ্জে লকডাউন (চলাচলে নিষেধাজ্ঞা) ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার।
তিনি জানান, আমরা গত ৯ এপ্রিল জনগণ ও যানবাহন চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। ৯ তারিখের গণবিজ্ঞপ্তির যে বক্তব্য তা প্রচলিত লকডাউন শব্দের একই অর্থ। আমরা সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করেছি। উপজেলা, আন্তঃ ইউনিয়ন যোগাযোগ বন্ধ, আমাদের জেলাকে যেন আমরা নিরাপদ রাখতে পারি এই ঘোষণাটি আগেই দেওয়া হয়েছে। সেটিই বলবৎ আছে। যেহেতু নতুন করে ১০ জন রোগী আমাদের শনাক্ত হয়েছে তাই এ বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে মনিটর করবো এটিই আমাদের সিদ্ধান্ত। তিনি আরো জানান, এ অবস্থায় ব্যাংক খোলা থাকবে, জরুরী প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, কৃষিপণ্যের যান চলাচল করতে পারবে। এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল (শুক্রবার) একটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সবাইকে নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হবে।
এদিকে জেলার ৫টি উপজেলায় আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ২ জন নারী, আর ৮ জন পুরুষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, গত ৭ এপ্রিল তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৮ এপ্রিল ১৬ জনের নমুনা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনের রেজাল্ট করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১ জন, টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ৪ জন, গজারিয়া উপজেলায় ৩ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় ১ জন ও শ্রীনগরে ১ জন।
এদিন স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলার করোনা আক্রান্তদের মধ্যে তিনজনই পুরুষ। তারা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) ও আরেকজন লক্ষ¥ীপুর গ্রামের আক্রান্ত পুরুষের বয়স ৪৯, অপর আক্রান্ত পুরুষের বয়স ৩৮।
শ্রীনগরে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি পাটাভোগ ইউনিয়নের ফৈনপুর এলাকায়। সদর উপজেলায় আক্রান্ত নারীর বাড়ি রামপাল ইউনিয়নের পানাম এলাকায় ও আক্রান্ত পুরুষের বয়স ৪০।
সিরাজদিখান উপজেলায় আক্রান্ত নারীর বাড়ি রশুনিয়া ইউনিয়নের আবিরপাড়া গ্রামে, তার বয়স ৭০।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় আক্রান্তরা হলেন আউটশাহী ইউনিয়নের ডুরাবতি গ্রামের ১ জন, শিমুলিয়া ইউনিয়নের ধামারণ এলাকার ১ জন তার বয়স ৩৫, ধীপুর ইউনিয়নের ডুলিহাটা গ্রামের ১ জন ও পুরা এলাকায় ১ জন।
টঙ্গীবাড়ীতে আক্রান্তদের মধ্যে একজনকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
করোনা আক্রান্তের ঘটনায় গত শুক্রবার দিবাগত রাতেই গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর গতকাল শনিবার ২টি গ্রামসহ ৯৩টি বাড়ি লকডাউন করে স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন। তবে আক্রান্ত ১০ জনের অবস্থা এখনো গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ। টঙ্গীবাড়ীতে আক্রান্ত ২ জনের মধ্যে ঢাকা মিরপুর থেকে একজন আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ৬ জন নারায়ণগঞ্জ থেকে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত শুক্রবার গভীর রাতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে বিষয়টি জানিয়েছে। রাতেই ৫টি উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জরুরী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের আইসোলেশনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য জেলায় শুক্রবার (১০ এপ্রিল) এ পর্যন্ত ৯৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।