নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস ও হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এদের দুইজনের মধ্যে যেকোন একজন এ নির্বাচনে বিজয়ী হবে। বিজয়ের লক্ষ্যে প্রার্থীরা হিসাব নিকাষ কষছেন। এ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এক্ষেত্রে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এ নির্বাচনে আলোচনায় আছেন হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের স্ত্রী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন। স্বামী হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব নির্বাচনে অংশ নিলেও স্ত্রী এ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। তাতে এখানে এ বিষয় আরো ব্যাপক আকারে জমে উঠেছে। স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে নির্বাচনের লড়াইয়ের মাঠে রয়েছেন। তবে এ নির্বাচনে চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিনের কোন পোস্টার নির্বাচনি এলাকায় সাঁটানো হয়নি। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব নতুন মুখ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বড় পুত্র। অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস ইতোপূর্বে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দুই দফায় এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে একবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো নতুন মুখ ছিলেন। এ নির্বাচনে তৃতীয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নাঙ্গল প্রতীকের এএফএম রফিক উল্লাহ সেলিমের। তিনি এ নির্বাচনে নতুন মুখ। তিনি গজারিয়ার সন্তান। এখানে এ নির্বাচন ঘিরে জাতীয় পার্টিতে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের নিয়ে কোন্দাল বিরাজ করছে। তাতে এখানে লাঙ্গলের ভোট প্রাপ্তি কিছুটা কমে যাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক ব্যানারে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেক প্রার্থীকে ভোটাররা তেমনটা চেনে না। এ নির্বাচনে আরো যেসব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মোঃ আজিম খান, চেয়ার প্রতীকের ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী বাবুল মিয়া, টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে বিএনএফ’র প্রার্থী মমতাজ সুলতানা আহমেদ, মোমবাতি প্রতীকের বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী মুহাম্মদ ওমর ফারুক, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী দুলাল হোসেন মন্ডল ও ছড়ি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী মোঃ শাহীন হোসেন। এ নির্বাচন থেকে শেষ সময়ে জাকের পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার মোল্লা তার মনোনয়নপত্রটি প্রত্যাহার করে নেন।
শেষ সময়ে নির্বাচন জমে উঠেছে। ইতোমধ্যে মৃণাল ও বিপ্লবের সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকের ক্যাম্প ভাংচুর করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থীরা আদালতের মুখোমুখি হন। ভোটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার, অনেক স্থানে উভয়ের টানানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার দৃশ্য দেখা গেছে। তাতে বর্তমানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৃণাল ও বিপ্লব সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থান করছেন। যেকোন সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে ভোটাররা। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের বাইরে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তারা এ নির্বাচনে কৌশলগত কারণে প্রার্থী হয়েছেন বলে ভোটাররা ধারণা করছেন। তাই এ আসনকে কেন্দ্র করে সকলের মাঝে কৌতুহল দিন দিন বাড়ছে।