রাজধানী ঢাকার গুলশানে প্রায় দুই মাস আগে খুন হন গারো মা-মেয়ে বেসেত চিরান (৬৫) ও সুজাতা চিরান (৪০)। এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তিন খুনি খুনিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার সব তথ্য-প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। এরপরও শুধু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আটকে আছে তদন্ত। তাই অভিযোগপত্র দিতে পারছে না পুলিশ। এ কারণে বিচারও শুরু করা যাচ্ছে না।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, গত ২০ মার্চ রাতে গুলশানের কালাচাঁদপুরে বেসেত চিরান ও সুজাতা চিরানকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিন পরদিন সকালে গুলশান থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার এক দিন পরেই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তাঁরা হলেন সুজাতার ভাগনে সঞ্জীব চিরান (২১), রাজু সাংমা ওরফে রাসেল (২৪), প্রবীণ সাংমা (১৯) ও শুভ চিসিম ওরফে শান্ত (১৮)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, তদন্তে দেখা গেছে, খুনের মূল পরিকল্পনা করেন সুজাতার ভাগনে সঞ্জীব চিরান। টাকা চুরির জন্য সঙ্গে থাকা তিনজনকে নিয়ে তিনি খালার বাড়িতে আসেন। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বসে সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবীণ—এই তিন বন্ধু মিলে খালা সুজাতার বাসা থেকে টাকা চুরির পরিকল্পনা করেন। তাঁদের ধারণা ছিল, খালার পরিবারের সবাই চাকরিজীবী। তাই তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে। এ জন্য গত ১৯ মার্চ ঢাকায় এসে বন্ধু রাজুর বাসায় ওঠেন তাঁরা। পরদিন সকালে সঞ্জীব রাজুর কাছ থেকে একটি ধারালো অস্ত্র নেন।
হত্যার দিন সকালে সঞ্জীব ও তাঁর বন্ধুরা খালার বাসায় গেলে সুজাতা তাঁদের নাশতার জন্য চা-বিস্কুট দেন। নাশতা শেষে সঞ্জীব তাঁর খালা সুজাতাকে ২০০ টাকা দিয়ে দেশীয় মদ আনতে বলেন। সুজাতা দেশীয় মদ নিয়ে এলে সবাই মিলে তা পান করেন।
এ সময় একপর্যায়ে রাজু ও প্রবীণ বেসেতের পা চেপে ধরেন এবং শান্ত বালিশ দিয়ে বেসেতের মুখে চাপা দেন। সঞ্জীব বেসেতের গলায় থাকা ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর সঞ্জীব ও রাজু সুজাতার মুখে বালিশচাপা দিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেন। এরপর পুরো বাসায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো টাকাপয়সা না পেয়ে চারজন শেরপুরের নালিতাবাড়ী চলে যান।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি বাস কাউন্টারের পেছনে ফেলে দেওয়া হয়। ওই চারজন গ্রেপ্তার এড়াতে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে র্যাব তাঁদের আটক করে।
সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, হত্যায় তিনজন সরাসরি অংশ নেন। তাঁরা হলেন সঞ্জীব চিরান, রাজু সাংমা ও শুভ চিসিম। হত্যার সময় মোবাইলে কল আসায় প্রবীণ সাংমা এ সময় নিচে নেমে যান। তাই হত্যায় তিনি সরাসরি অংশ নেননি।
মামলার বিষয়ে সঠিক সময় বিচার শুরু না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মামলার বাদী সুজাতার স্বামী আশিষ মানকিন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘জানি না কেন মামলা আটকে আছে। মামলার সব আসামি গ্রেপ্তার আছে। তবু কেন বিচার শুরু হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে আমি কষ্টের জীবন পার করছি। ওদের দেখার কেউ নেই। আমি চাই দ্রুত মামলার বিচার হোক এবং অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাক।’
মামলার কার্যক্রম কেন আটকে আছে জানতে চাইলে মো. সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, খুন হওয়া মা-মেয়ের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এটি পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া যাবে এবং বিচার শুরু হবে।
ময়নাতদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছি বলে সময় লাগছে। তবে এটির ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটি পেলেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যাবে।’