বিশেষ প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে আলোচিত স্কুল ছাত্র নিরব (১৫) হত্যার একবছর গত বৃহস্পতিবার পূর্ণ হলেও এ মামলার সঠিক বিচার নিয়ে সংশয় ও শঙ্কায় রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। এরই মধ্যে পুলিশের দুর্বল চার্জশিটের সুযোগ নিয়ে ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিন নিয়ে এসে প্রকাশ্যে স্বজনদের চোখের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এ মামলার প্রধান তিন আসামি। আর এতে করে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী মামলার ভবিষ্যৎ সুবিচার নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করছেন। এমনকি পুলিশের চার্জশিটেও নানান অসঙ্গতি ও অনেক দুর্বলতা রয়েছে। ইতিপূর্বে এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলামত পুলিশ ইচ্ছে করেই নষ্ট করেছে বলে জানান মামলার বাদী নাঈম খান। আলোচিত স্কুল ছাত্র নিরব হত্যাকাণ্ডের পরে মামলার সঠিক বিচার নিয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধন করেছিল। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং এ মামলাটি রহস্যজনক কারণেই পুলিশ অনেক হালকা করে দিয়েছে বলে জানান অভিযোগকারীরা। এ মামলাটি নিয়ে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। মামলা সূত্রে জানা যায়, গেলো বছরের ৩১ জানুয়ারি কুমারভোগ পুনর্বাসনের বাসিন্দা নাঈম খানের পুত্র নিরবের গলা কাটা অবস্থায় পুনর্বাসনের উত্তর-পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে লৌহজং থানা পুলিশ। আর এর আগের দিন ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিরবকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় রাব্বি, আলাল ও আরিফ নামের তিন তরুণ। নিরব নিখোঁজের রাতেই দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং নিরবের বাবার সহযোগিতায় পরে আরেকজনকে মুন্সীগঞ্জ থেকে আটক করে থানা পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি রাব্বি (১৯), ২ নম্বর আসামি আলাল (২০) এবং ৩ নম্বর আসামি আরিফ (২১) কে পুলিশ লোক দেখানো আটক করলেও তারা জামিনে এসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। নিরব হত্যার এক বছরেও খুনের আলামত উদ্ধার করতে আসেননি পুলিশ। সেই সাথে ঘরে থাকা আলামত নষ্টসহ খুনের আরও বেশ কিছু আলামত চার্জশিটে বাদ দিয়ে মামলা হালকা করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এমন অভিযোগ দিয়ে নিরবের বাবা নাঈম খান মুন্সীগঞ্জের কাগজকে জানান, নিরবকে হত্যা করার পরে আরিফের নিজ বাসায় আরিফ ও আকাশ রক্তমাখা জামা কাপড় পরির্বতন করেন। ওই দিন রাতে লৌহজং থানার এসআই হারুন-আর-রশিদ সে ঘরে তালা দেয়। ১০-১২ দিন পর আসামি আরিফের মামা জুলহাস তালা ভেঙ্গে আলামত নষ্ট করে। আমি অনেকবার লৌহজং থানা পুলিশকে বলেছি সে ঘর থেকে রক্তমাখা জামা কাপড়সহ খুনের আলামতগুলো উদ্ধার করে নিতে। কিন্তু একবছর হয়ে গেছে পুলিশ এখনও এখানে আলামত উদ্ধার করতে আসেনি, নেয়নি কোনো খোঁজ। খুনের আলামতগুলো ঘরের তালা ভেঙ্গে নষ্ট করে দেয় আরিফের মা নেছা বেগম (৫০), মামা ও আলালের কাকা জুলহাস বেপারী (৫৫)। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও এ বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। পুলিশ আসি আসি করেও এখনও আসেনি। এদিকে নিরব নিখোঁজ হবার রাতে পুলিশ আরিফের মায়ের কাছ থেকে আরিফের এবং রাব্বির কাছ থেকে রাব্বির মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। কিন্তু এ মোবাইল ফোনের কথাও চার্জশিটের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তিনি আরও জানান, আলালের বাসার কাছ থেকে ফোঁটাফোঁটা রক্ত আমি নিজে (নিরবেব বাবা) পলি ব্যাগে তুলে দেই। এ রক্তের কথাও চার্জশির্টে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। সে সাথে আরও একটা কথা না বললে নয়, আসামিদের বয়স চার্জশিটে দেওয়া হয়েছে অনেক কম, সত্যিকারার্থে আসামিদের বয়স আরও বেশি হবে। নাঈম খান বলেন, পুলিশ ইচ্ছে করলে সব করতে পারে কিন্তু আসামি ইমতিয়াজ ও আকাশের সন্ধান এক বছরেও পায়নি। কেন ও কি কারণে পায়নি সে প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তিনি কান্নার সুরে আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা প্রথম মৃত্যুবাষির্কীর দিনেই জুলহাস তার মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে ধুমধাম করে। সারারাত জুলহাসের বাসায় গান বাজিয়েছে আর আমার বাসায় বুক ফাঁটা কান্নায় সকলে ভেঙ্গে পড়েছি। এই জুলহাস আরিফদের ঘরের তালা ভেঙ্গে নিরব হত্যার আলামত নষ্ট করেছে। সাথে আরিফের মা নেছা বেগমও। আজ আমরা বড়ই অসহায়। তবে মামলাটি যদি পিবিআই পুনরায় তদন্ত করতো তা হলে খুবই ভালো হতো। এখন আল্লাহর কাছে বিচার চাওয়া ছাড়া আর কারও কাছে বিচার চাইতে পারছিনা।
বাদীর অভিযোগের বিষয়ে লৌহজং থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, এই মামলার চার্জশিট ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। বাদী এতে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে না রাজি দিতে পারেন। আদালত আমাদের পুন: তদন্তের আদেশ দিলে আমরা তদন্ত করবো।