ফিচার ডেস্ক
প্রতিদিন অফিসে কাজ কিংবা দায়িত্ব পালন করতেন। করোনার ফেরে এখন বাসায় বসে অফিসের কাজ সারছেন। পোশাকি নাম হোম অফিস। লোকজন, যানবাহনের ভিড় আর ধুলাবালির ভেতর দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে না। বেশ আরামের বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক থাকছে কি না খেয়াল রাখছেন তো?
অফিসে কাজ করতেন নির্দিষ্ট চেয়ার-টেবিলে বসে, মাঝে মাঝে উঠতেন এদিক সেদিক যেতেন। অফিসের আগে-পরে এখানে সেখানে যাতায়াত, সিঁড়ি ভাঙতেন। ফলে ঘাড়-কোমরসহ সারা শরীর সচল থাকত। এখন লকডাউনে ঘরে বসে অফিস করতে গিয়ে ব্যত্যয় ঘটছে এসবের। যত বেশি আরাম করে কাজ করছেন তত চাপ পড়ছে শরীরের প্রতিটি পেশি, সন্ধি, এমনকি চোখেও।
হোম অফিসের কারণে ৮ ঘণ্টা কাজের সময় বাড়তে বাড়তে ঘণ্টা ১০-১২ হয়ে গেছে অনেকের। বন্ধ হয়েছে এ টেবিল সে টেবিলের আড্ডা এবং সেই সুবাদে অঢেল রিল্যাক্সেশন। যেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বে কম্পিউটার রেখে সঠিক চেয়ারে সোজা হয়ে বসে, ঘাড় সোজা রেখে কাজ করার কথা, সেখানে এখন এমনভাবে কাজ করছেন যে শরীরের প্রতিটি পেশী, সন্ধি ভুলভাবে থেকে যাচ্ছে বেশ খানিকটা সময়। আবার যখন অন্যভাবে বসলেন বা শুলেন, তখনো সেই এক ব্যাপার। শরীরের কোনো পেশি বা সন্ধিই যেভাবে তার থাকার কথা, সেভাবে থাকতে পারছে না।
তাতে কী হচ্ছে বা হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘাড়ে-কোমরে ব্যথা, কখনো আবার ব্যথা সারা শরীরে, গা ম্যাজম্যাজ, মাথা টিপটিপ, বিরক্তি ইত্যাদির সৃষ্টি। যতই এভাবে কাজ করবেন তত বাড়বে ব্যথা। যখন লকডাউন খুলবে বা অফিসে যাওয়া শুরু করবেন ততদিনে ব্যথার ধাতই হয়তো হয়ে যাবে। তখন তাকে সারানো এক বিরাট ঝকমারি ব্যাপার হবে।
দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকার কারণে রোদ গায়ে লাগছেই না। কাজেই শরীরে ভিটামিন ডি-র টান পড়বে। তাতেও ব্যথা বাড়তে পারে।
তাহলে হোম অফিসে করণীয় কী
চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করতে চেষ্টা করুন। মাঝেমধ্যে এক-আধবার বিছানা বা সোফায় বসে কাজ করলেও খেয়াল রাখুন ঘাড় ও কোমর যেন সোজা থাকে।
চেয়ার-টেবিলের উচ্চতা এমন রাখুন যাতে ঘাড় সোজা রেখে কাজ করতে পারেন।
কাজের মাঝে ফোন এলে কাঁধ আর ঘাড়ের মাঝে ফোন ধরে কাজ চালিয়ে যাবেন না। হয় স্পিকার চালু করুন, না হলে ইয়ার ফোনে কথা বলুন, নয়তো কাজ বন্ধ রাখুন সেই সময়টুকু।
সাধারণ চেয়ারে বসে কাজ করলে কোমরের কাছে কুশনের সাপোর্ট দিন।
কম্পিউটারে ঘণ্টা খানেক কাজ করার পর মিনিট দশেক চোখের কাজ বন্ধ রাখুন। ফাঁকা পেয়েছেন বলে একটু টিভি দেখে নিলেন বা মোবাইল চেক করলেন, তা কিন্তু হবে না। একটু চলাফেরা কি স্ট্রেচিং করলে বা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে চোখ, ঘাড়, কোমর সবই বিশ্রাম পাবে।
৮-১০ ঘণ্টা কাজের মাঝে কম করে দুবার খোলা হাওয়ায় ১০-১৫ মিনিট ঘুরে আসুন। বাইরে যাওয়া তো এখন সম্ভব নয়, তাই বারান্দায় কিংবা ছাদে একটু পায়চারি করে নিন।
দিনে অন্তত একবার কয়েকটি ব্যায়াম করুন। দিনে একবার কি দুবার ১৫-২০ মিনিট একটু জোরে হাঁটুন।
রোটেশনাল নেক এক্সারসাইজ করুন। ব্যাপারটা আর কিছুই না, প্রথমে সোজা দাঁড়িয়ে বা বসে ঘাড় পিছনে নিয়ে ছাদের দিকে তাকান। এবার ঘাড় ঝুঁকিয়ে তাকান মেঝের দিকে। এরপর পর্যায়ক্রমে ডান দিকে ও বাঁ দিকে তাকাবেন। এই ব্যায়াম ঘাড়কে সচল রাখে।
কাজের মাঝে উঠে একটু আড়মোড়া ভাঙার মতো করবেন।
বাড়ির খাবার যেমন খাচ্ছেন খান, সঙ্গে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার একটু খেতে হবে। কাজেই ডিম, দুধ, দই খাওয়ার চেষ্টা করুন নিয়মিত। পানি খাবেন পর্যাপ্ত। চা-কফি, কোল্ডড্রিঙ্ক-মদ, সিগারেটে আপাতত দূরে রাখুন।