স্বাস্থ্য প্রতিবেদক
সূর্যের প্রখর তাপ আর করোনার সংক্রমণে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গরমের এই সময় পানিশূন্যতা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায়। শরীরে পানি কমে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, শসা, ফলের রস, ভেষজ পানীয় শরীরকে প্রাকৃতিক উপায়ে সুরক্ষা দিতে পারে। সাধারণত যখন কোনও ব্যক্তি সুস্থ থাকে, তখন তার শরীর নিজেই নিজেকে ছোট-খাটো সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। করোনাও এক ধরনের সংক্রমণ, যদি কোনও ব্যক্তি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তবে তার পক্ষে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং বাঁচা সহজ হয়ে যায়। করোনার ওষুধ বা প্রতিষেধক যেহেতু আবিষ্কার হয়নি। তাই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়াই ভালো।
আয়ুর্বেদের মতে, ভেষজ উপাদান চবনপ্রাশ, উষ্ণ পানি, অর্ধেক চামচ হলুদ দিয়ে ১ গ্লাস গরম দুধ দিনে অন্তত ২ বার পান করা উচিত। কাশি হলে লবঙ্গ মিশ্রিত মধু খেতে হবে দিনে অন্তত ২ থেকে ৩ বার। খাবারে হলুদ, জিরা, ধনিয়া এবং রসুন ব্যবহার করতে হবে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য বেশ উপকারি। বিশ্বব্যাপী ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রোগ প্রতিরোধে শরীর চাঙ্গা করতে জুড়ি নেই ভেষজ প্রাকৃতিক পানীয়ের। ভেষজ পানীয় নানা কারণে বেছে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য সচেতনরা। এর গুণের কথাও কারও অজানা নয়। প্রাকৃতিক ভেষজ পানীয়ের রয়েছে আরও অনেক স্বাস্থ্যগুণ। জেনে নিন প্রাকৃতিক ভেষজ পানীয়ের কিছু উপকারী তথ্য।
আয়ুর্বেদীয় ভেষজ চা
রোগ প্রতিরোধে এবং নানা জটিল অসুখের জন্য বিভিন্ন সময় আয়ুর্বেদিক ভেষজ চা ভালো ফলাফল দেয়। আয়ুর্বেদীয় ভেষজ চা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় গুড়/মধু, দারুচিনি, গোলমরিচ, শুকনো আঙ্গুর, তুলসী পাতা, শুকনো আদা, লেবু। এই ভেষজ চা তৈরির জন্য একটি পাত্রে পানি গরম করুন। এরপর এতে লেবু ছাড়া অন্যান্য উপাদানগুলো পরিমাণমতো দিয়ে দিন। আপনি এটি মিষ্টি করতে যদি চিনির পরিবর্তে গুড় ব্যবহার করেন তবে ভাল হয়। অল্প আঁচে এটি ফুটিয়ে নিন। এবার এটি একটি কাপে বের করে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিন। আপনার স্বাদ অনুযায়ী গুড় এবং লেবু ব্যবহার ভেষজ চা তৈরি করতে পারেন। এটি আপনার ইমিউনিটি শক্তিশালী করতে, সকাল এবং সন্ধ্যায় এটি পান করুন। বিভিন্নভাবে প্রাকৃতিক উপাদান মিশ্রণ করে ভেষজ চা তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও ভেষজ চায়ের রয়েছে আরো অনেক স্বাস্থ্যগুণ।
আদা চা: যে কোনও ব্যথা কমাতে উপকারী আদা চা। গ্লাইসেমিক রেট কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে আদা চা।
ক্যামোমাইল চা: সুন্দর গন্ধের জন্য মুড ভাল করতেই খাওয়া হয় ক্যামোমাইল টি। তবে পেটের অস্বস্তি, আলসার, ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব কাটাতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
পেপারমিন্ট চা: হজমের সমস্যা, পেটের অস্বস্তি নিমেষে দূর করতে দারুণ কার্যকর মেন্থল চা বা পেপারমিন্ট টি।
বিছুটি চা: এই পাতার কিন্তু অনেক গুণ। ক্লোরোফিলে পরিপূর্ণ হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেমন সাহায্য করে বিছুটি চা, তেমনই এর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট কিডনি পরিষ্কার রাখতেও ভাল কাজ করে।
ল্যাভেন্ডর চা: এই ফুল শুধু দেখতেই সুন্দর তা নয়, এর এসেনশিয়াল অয়েল উৎকণ্ঠা, ব্যথা, মাইগ্রেন ও স্ট্রেসের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত উপকারী।
পুদিনা চা: পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভোগা মহিলাদের শরীরে টেস্টোটেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে পুদিনা চা বা স্পেয়ারমিন্ট টি।
ড্যানডেলিয়ন চা: এই বিশেষ মূলক অগ্ন্যাশয়, লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগলেও খেতে পারেন ড্যানডেলিয়ন চা।
তুলসি চা: বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে তুলসি। আর এসময়ে অধিকাংশ চায়ের দোকানের পাওয়া যায় তুলসি চা।
দারুচিনি চা: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণ রয়েছে সিনামন টি বা দারচিনি চায়ের। টাইপ টু ডায়াবেটিস, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের সমস্যায় ভাল কাজ দেয় দারচিনি চা।
হলুদ চা: অবসাদ কাটাতে, ব্যথা উপশমে,ওজন কমাতে দারুণ কাজ দেয় হলুদ চা বা টারমারিক টি।
যষ্টিমধু চা: খাদ্যনালী ও পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যষ্টিমধু চা। এলডিএল অক্সিডশন রুখে হার্টের সমস্যা দূরে রাখে, টেস্টোটেরনের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে এই চা।
লেমন বাম চা: মিষ্টি লেবুর মতো সুগন্ধ এই পাতার। হজমের সমস্যা দূরে রাখার পাশাপাশি নার্ভের সমস্যা দূরে রাখে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।