নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে নিম্ন আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে বিবাদী পক্ষের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাড়িঘর হারিয়ে অন্তত ১৬ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ভুক্তভোগী একটি পরিবার।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার টেঙ্গারচর ইউনিয়নের পূর্ব ফুলদী মৌজায় বৈদ্যারগাঁও গ্রামে আরএস ৮৬ দাগে ৫ শতাংশ সম্পত্তি নিয়ে বজলুর রশিদ গংদের সাথে প্রতিবেশী বরকত উল্লাহ গংদের গজারিয়া সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা চলছিল। সম্প্রতি বাদী বজলুর রশিদ গংদের পক্ষে মামলার রায় হলে আদালত নালিশী সম্পত্তি বাদী পক্ষকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। এদিকে নিম্ন আদালতের এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করে বিবাদী বরকত উল্লাহ গং। শুনানী শেষে গত ৩১ অক্টোবর নিম্ন আদালতের রায়ের উপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। তবে উচ্চ আদালতের আদেশের কপি না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে গত ৫ নভেম্বর রবিবার নালিশী সম্পত্তির স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জায়গা বাদীপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নালিশী আরএস ৮৬ দাগের ৫ শতাংশ সম্পত্তি ছাড়াও ৮৫ দাগের সম্পত্তির স্থাপনা ভাঙচুরসহ মোট ১৬ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী বিবাদীপক্ষের।
বিবাদী বরকত উল্লাহ বলেন, আমাদের জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাল্টাপাল্টি মামলা চলছিল। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় গত ৬/৭ মাস আগে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে নালিশী সম্পত্তি নিয়ে সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশে সম্পত্তি আমরা পাবো বলে রায় দেওয়া হয়। উভয়পক্ষকে কোর্ট থেকে তাদের মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়। আমরা কোর্ট থেকে মামলা উঠিয়ে নিলেও অপরপক্ষ তাদের মামলাটি উঠায়নি। আমরা মামলার বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ার সুযোগে ওই পক্ষ অনেকটা একতরফাভাবে একটা ডিগ্রি হাসিল করে। সেই ডিগ্রির কপি দিয়ে তারা আমাদের জায়গা দখল করার চেষ্টা করলে আমরা নিম্ন আদালতের ডিগ্রির উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করি। আদালত তিনমাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিলেও অপরপক্ষ মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে জোরপূর্বক আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গোটা একটি পরিবার এখন বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। আমরা এর বিচার চাই।
বাদীপক্ষের ফরহাদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা যা করেছি তা আইনের মাধ্যমে করেছি। এখানে কোনকিছু অন্যায় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
এ বিষয়ে টেঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ফরাজী বলেন, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিচার করে দিয়েছি। উভয়পক্ষ সেই রায় মেনেও নিয়েছিল। উভয়পক্ষের কোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও এক পক্ষ মামলা প্রত্যাহার করেনি। গত রবিবার সকালে শুনলাম, আদালত থেকে লোকজন স্থাপনা ভাঙতে এসেছে। আমি নিজে সেখানে উপস্থিত হয়েছি এবং উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ সম্পর্কে তাদেরকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা তা আমলে নেয়নি। আমি স্থাপনা সরিয়ে নিতে তাদের কাছ থেকে কয়েক ঘন্টা সময় প্রার্থনা করেছিলাম তারা সেটিও না শুনে তাদের লোকজন দিয়ে ভাঙচুর করে স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক জায়গা বাদীপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ আলম বলেন, আমার পক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনেছেন। আমরা সেটি নিম্ন আদালতের দৃষ্টিগোচর করেছি। তারপরও আমার পক্ষের সাথে যা করা হয়েছে তা অমানবিক। বিষয়টি নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।