আমিরুল ইসলাম নয়ন : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় করার সময় ওই গ্রামের অন্তত শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কারও ভবনের আংশিক, কারো সম্পূর্ণ বসতঘরের টিনের চাল ও বেড়া ভেঙে গেছে। টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন কীভাবে ঘর-বাড়ি মেরামত করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তাদের চোখেমুখে বিষাদের ছাপ।
সরেজমিনে গতকাল বুধবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মর্টারশেলের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছে গ্রামবাসীর বাড়িঘর। বিস্ফোরণের স্থলে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। বিস্ফোরণে ২টি পাকা মসজিদ ও ৮টি পাকা ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে, ভেঙে গেছে জানলার গ্লাস। কয়েকটি দোকানসহ ৯০টির মত সেমিপাকা ও টিনশেড বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় এসব বাড়ির বিভিন্ন অংশ উড়ে গেছে। এসব বাড়িতে থাকা ৪০টির মত ফ্রিজ, টিভি, ফ্যানসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তাদের দাবী, কোন জনমানবহীন স্থানে ওই মর্টারশেলটি নিষ্ক্রিয় করা হলে তাদের এতো ক্ষয়-ক্ষতি হতো না।
ক্ষতিগ্রস্ত সেলিম মিয়া বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমার দুটি টিনশেড চৌচালা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আমার প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি’।
ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুর বারেক বেপারী বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমার একতলা বিল্ডিংয়ের চারদিকের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সেটা টাকায় হিসাব করলে ১৫ লক্ষ টাকার কম হবে না’।
ক্ষতিগ্রস্ত জসিম উদ্দীন বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের ঘটনায় আমার দুটি টিনশেড ঘরের প্রায় সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। টিনের বেড়া, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক মালামাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমি পথের ফকির হয়ে গেছি’।
ক্ষতিগ্রস্ত হযরত আলী বলেন, ‘আমার বসতঘর ও ঘরের আসবাবপত্র মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকার সহায়তা না করলে আমাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন’।
এছাড়া মাহফুজ ফকির, ইয়াসিন, মইন উদ্দিন তাদের বাড়ির টিনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতেই ক্লান্ত। এখন কীভাবে ঘর মেরামত করবেন, সে চিন্তায় ঘুম নেই তাদের।
এদিকে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ঢাকা বিভাগীয় সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে। এর আগে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহমান শফিকের নেতৃত্বে বিএনপির আরেকটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার আশ্বাস দেন।
বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করার কাজ শুরু করেছি আমরা। দুপুর দুইটা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর এই সংখ্যাটা সঠিকভাবে বলা যাবে’।
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলেও বুধবার সকাল থেকে পরিস্থিতি একেবারে শান্ত। পুলিশের খোয়া যাওয়া একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে’।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থেই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে’।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সকালে গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষিজমিতে মাটি কেটে আইল বানাতে গিয়ে একটি মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরবর্তীতে পুলিশ জানায়, এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল। পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গত মঙ্গলবার রাত ৭টা ৫৬ মিনিটে মর্টারশেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে।