নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখলের চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো। বিপরীতে সেই আন্দোলন মোকাবিলা করে যথাসময়ে নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোচ্ছে বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগ। সেলক্ষ্যে সামনের যে কোনো বাধা অতিক্রম করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপিসহ এর জোটসঙ্গীদের চলমান আন্দোলন গত দুই সপ্তাহের বেশি সহিংসতার মধ্য দিয়ে চলছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি আরও সহিংস হয়ে উঠবে ও ব্যাপক ধ্বাংসাত্মক কর্মকান্ড চালাতে পারে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন।
বিএনপির ধারাবাহিক অবরোধে ইতোমধ্যে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে তা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই গণপরিবহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, ভাঙচুর হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এ বিষয়টিও সরকারের চিন্তায় রয়েছে। তবে সহিংসতা প্রতিহত এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও কঠোর অবস্থান নিয়ে রাজপথে আছে এবং এই অবস্থান নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত রাখবে এ ঘোষণা আগেই তারা দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করলেও শেষ পর্যন্ত দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এমনটা ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়া বিএনপি না এলেও দলটির কোনো কোনো নেতা অন্য দল বা জোট থেকে নির্বাচনে আসতে পারেন; রাজনীতিতে এমন আলোচনাও আছে। সেক্ষেত্রে দলটি ভেঙে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচিত। বিএনপির পক্ষ থেকেও অভিযোগ আছে সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে। এ প্রক্রিয়ায় আটক রাখা নেতাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে এবং বাইরে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের নির্বাচনে টানতে বিভিন্নভাবে চাপ তৈরি করা হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে দলটির।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন ও তা ঠেকাতে যে সহিংস, নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে এতে দলটির অনেক নেতাকর্মীরই সমর্থন নেই। এই সহিংস ও নাশকতার পথ অব্যাহত রাখলে এবং নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপিই যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে সেটাও দলটির ওই নেতাকর্মীরা বুঝতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি দলটির সিনিয়র নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য থেকেই এটা স্পষ্ট। আর এ কারণেই বিএনপির শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা না হলে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দলটির অনেক নেতাকর্মীই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ভাঙবে কি ভাঙবে না সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না। আসলে বিএনপি তো কোনো রাজনৈতিক দল না। মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল কোনো রাজনৈতিক আদর্শ তাদের নেই। থাকলে জোর করে কেউ কাউকে রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।
এদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ও দলটির সহযোগীদের যেকোনো তৎপরতা প্রতিহত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েই আগাচ্ছে সরকার। তাদের বাধা অতিক্রম করে নির্বাচন করা সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে। গত ১০ নভেম্বর এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন দেশের গণতন্ত্র কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। এই বাস্তবতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও নাশকতা ও সহিংসতা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের মধ্য থেকেও যাতে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে সে উদ্যোগ নিতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দলের নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে। সবদিক থেকে কঠোর অবস্থানে থেকেই সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের করবে দলটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তব্যে সরকারের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই যথাসময়ে নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগ
আগের পোস্ট