নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও বাজার হতে চাঠাতিপাড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি নিজস্ব অর্থায়নে সংস্কার করেছে এক সমাজসেবক। গতকাল শনিবার সকাল হতে মুন্সীগঞ্জের আকাশ জুড়ে ঘন কুয়াশা আর শীতে যখন সবার নাকাল অবস্থা এর মধ্যে শ্রমিকের সাথে কোদাল হাতে নিয়ে রাস্তা সংস্কার কাজে নেমে পড়েন পাঁচগাঁও এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মিজানুর রহমান মোল্লা। এর আগে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের পরিত্যক্ত জমি হতে নিজ অর্থায়নে মাটি কিনে ট্রলার ঘাটে এনে পরে ট্রলার ঘাট হতে ওই মাটি ট্রলিতে ভরে এনে শ্রমিকের সাথে রাস্তা সংস্কার কাজে নেমে পড়েন তিনি। সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত ২০ জন শ্রমিকের সাথে নিজে কাজ করে সংস্কার করে দেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও বাজার হতে চাঠাতিপাড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি। এর আগেও তিনি পাঁচগাঁও-ঝিনাইসার সংযোগ সড়ক, পাঁচগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক, কলমা হতে পাঁচগাঁও পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ, দশত্তর চিত্রকড়া এলাকার কয়েকটি সড়ক নিজস্ব অর্থায়নে সংস্কার করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, পাঁচগাঁও বাজার হতে চাঠাতিপাড়া গ্রাম পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি গত কয়েকবছর যাবৎ সংস্কার না করায় এ রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া এ রাস্তার পাঁচগাঁও বাজারসংলগ্ন একমাত্র ব্রিজটির দুই পাশের মাটি ধ্বসে গিয়ে ব্রীজের উপর দিয়ে যান চলাচল করতে খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। ফলে পাঁচগাঁও বাজার হতে পণ্য পরিবহন করতে চাঠাতিপাড়া গ্রাম ও পাঁচগাঁও গ্রামের উত্তরাংশের লোকজনসহ আশেপাশের মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। ভোগান্তিতে পড়েছিল এ পথে যাতায়াতকারী কয়েক হাজার মানুষ।
চাঠাতিপাড়া গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি বলেন, আমরা আমাদের গ্রামের পাশের পাঁচগাঁও বাজার হতে সবসময় হাট-বাজার করে থাকি। এছাড়া গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে আমরা পাঁচগাঁও বাজারে প্রথমে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাই। কিন্তু আমাদের গ্রাম হতে পাঁচগাঁও বাজারে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির মধ্যে অনেক বড় বড় গর্ত থাকায় আমরা এ রাস্তায় গাড়ি দিয়ে ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছিলাম না। তাছাড়া গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতে নিতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। এখন রাস্তাটি ঠিক করায় আমাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হলো।
এ ব্যাপারে পাঁচগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী নুরু বেপারী বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে আমাকে দোকানে যেতে হয়। একটু বৃষ্টি হলে এ রাস্তাটির মধ্যে সৃষ্টি হওয়া গর্তে পানি জমে পুরো রাস্তাটি কাদা হয়ে যায়। হেঁটে যেতেও খুব কষ্ট হতো। এছাড়া এ রাস্তায় আগে অটোসহ অন্যান্য যানবাহন চললেও গতবছর হতে যানবাহন চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এখন রাস্তাটি মিজান মোল্লা ঠিক করে দেওয়ায় আমরা ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারবো।
অটোচালক খোকন মিয়া বলেন, এ রাস্তা দিয়ে আগে অটো চালালেও গত এক বছর ধরে রাস্তাটিতে গর্ত হওয়ায় ঠিকমত অটো চালাতে পারছিলাম না। এতে আমার আয়ও কমে গিয়েছিল। এখন রাস্তাটি ঠিক করায় এ রাস্তা দিয়ে অটো চালাতে পারবো। এতে আমার আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে রাস্তা সংস্কারকারী মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, রাস্তাটিতে গর্ত হয়ে অনেকদিন যাবৎ পড়েছিল। এ রাস্তায় ঠিকমতো গাড়ি চলাচল করতে পারছিল না। ফলে পাঁচগাঁও বাজার হতে পণ্য আনা-নেওয়া করতে মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। তাই প্রথমে ট্রলার দিয়ে নদীপথে মাটি এনে পরে নদীঘাট হতে ট্রলি দিয়ে মাটি তুলে এনে আমি নিজে উপস্থিত থেকে রাস্তাটি সংস্কার করে দিলাম যাতে পণ্য নিয়ে এ পথে যাতায়াত করতে কষ্ট পেতে না হয়।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমার উপজেলায় এতে খারাপ রাস্তা আছে আগে আমার জানা ছিল না। তারপরেও যদি কেউ নিজ উদ্যোগে এ ধরনের মহৎ কাজ করে থাকে তাহলে অবশ্যই সে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।