নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনালী ব্যাংক শাখায় গ্রাহককে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে গেম খেলার ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি ওই শাখায় তদন্ত শুরু করেছে। গত রবিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় সোনালী ব্যাংকের আলাদা আলাদা দুই সদস্য বিশিষ্ট ২টি কমিটি ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে। সংবাদটি গত ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত হলে গত ২৮ ডিসেম্বর দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে মুন্সীগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ। এই দুই সদস্য কমিটির প্রধান হলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিসের এজিএম বজলুর রহমান এবং অপর সদস্য সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হাবিবুর রহমান। ঢাকা সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিস হতেও অনুরূপ কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখার ডিজিএম মো. আব্দুল মতিন। তবে তিনি ঢাকা থেকে আসা দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম বলতে পারেননি।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক মুন্সীগঞ্জ শাখার ডিজিএম আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি নিজে গত ২৮ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেলা সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস হতে এজিএম বজলুর রহমানকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেই। অন্যদিকে ঢাকা সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় অফিস হতেও অনুরূপ কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া আমিও বিষয়টি আলাদাভাবে তদন্ত করি। মুন্সীগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপল অফিস ও ঢাকা সোনালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় অফিস হতে আলাদা আলাদা ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত করে। এছাড়া আমি নিজেও আলাদাভাবে তদন্তে গিয়েছিলাম। গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখেছি, অভিযুক্ত কর্মকর্তা ঘটনার সময় দেড় ঘন্টা মোবাইলে কোন গেম খেলেনি। সে ওই সময়ে ভিডিও কলে তার পরিবারের সাথে ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের মতো সময় কথা বলেছে। তিনি বলেন, আগামীকাল অথবা আগামী পরশু দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী বাবু হাওলাদার বলেন, তদন্ত কমিটি আমাকে ডাকায় আমি দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গীবাড়ী সোনালী ব্যাংকের শাখায় যাই। গিয়ে দেখি ওই বিষয়ে তদন্ত চলছে। এসময় আমার সাথে সেদিন কি হয়েছিল জানতে চাওয়া হলে আমি বিস্তারিত বিষয়টি তাদের বলেছি।
উল্লেখ্য, এর আগে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে বাবু হাওলাদার নামের হাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে গত ২৬ ডিসেম্বর প্রায় দেড় ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখে ব্যাংকের ডেস্কের ভেতরে মোবাইলে গেম খেলায় ব্যস্ত ছিলেন ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিদ্যুৎ। তার বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী বাবু হাওলাদার এর আগে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের একটি প্রকল্পের বিল উত্তোলন করতে পিআইও অফিস থেকে দেওয়া একটি রশিদ নিয়ে আমি ও কাইয়ূম মেম্বার সোনালি ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিদ্যুতের কাছে জমা দেই। সরকারী বিধি অনুযায়ী ওই রশিদের বিনিময়ে ব্যাংক কর্মকর্তার আমার কাছে রশিদের সমপরিমাণ টাকার একটি চেক দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় দেড় ঘন্টা সময় অতিবাহিত হলেও তিনি বিধি অনুযায়ী আমার রশিদের বিনিময়ে চেক না দিয়ে মোবাইলে গেম খেলছিলেন। পরে উনাকে ভালোভাবে বললাম ভাই, আমিতো রশিদ জমা দিয়েছি। রশিদের বিনিময়ে আমার চেকটা দেন। উনি আমার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন, আপনার বিলের রশিদ তো আমার কাছে জমা নাই। পরে আমি বললাম আপনার কাছেই তো জমা দিয়েছি ভালো করে দেখেন। পরে রশিদ খোঁজাখুঁজি করে তার সামনে থাকা একটি ঝুড়িতে আমার দেওয়া রশিদটি তিনি দেখতে পান। পরে আমি উনাকে বললাম আপনার বেখেয়ালির কারণে আমাকে দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। এসময় ওই কর্মকর্তা আমার সাথে রাগারাগি করে বলেন, তুই আরো এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাক। পরে বিষয়টি ব্যাংকের ম্যানেজারকে বললে তিনি এসে আমাকে রশিদের বিনিময়ে সমপরিমাণ টাকার চেক দেন। পরে আমি ওই চেক জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করি।
এ ঘটনায় গত ২৭ ডিসেম্বর একটি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এই সংবাদটি সারাদেশে ভাইরাল হয়। পরে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা অভিযোগকারী বাবু হাওলাদারের কাছে বিষয়টি আপোষ মীমাংসার জন্য কয়েক দফা অনুরোধ করেন। পরে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করেন দুটি আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি।