* পট পরিবর্তনে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা
* পদ্মা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে ছিনতাই করে তারা
কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর মূলচর গ্রামে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় একাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী মূলচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বসতবাড়ি থেকে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে দাবী ভুক্তভোগী পরিবারের।
ঘটনার সময় স্থানীয় গ্রামবাসীর ধারন করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দিঘীরপাড় এলাকার কিশোর গ্যাং গ্রুপের আলিফ (২০), ইয়াসিন (২২), সানি (২৩), লিমন (২৩), ইসমাঈল (১৮), কোবা (১৬), নজু (১৬), রাতুল (১৭) গং হাতে কাঠের ডাসা, ধারালো চাকু নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মূলচর গ্রামের নাসির হালদারের বাড়িতে প্রবেশ করেন।
ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নাসির হালদারের বসতঘরের টিন ও কাঠের তৈরী বেড়া কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুলে ফেলে এবং তার পাকা ভবনের জানালার থাই গ্লাস একাধিক স্থানে ভেঙ্গে ফেলছে। এরপর টিনের তৈরী ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাসির হালদারের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট শেষে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা একই গ্রামের ট্রলার চালক হবি হালদারের বাড়িতে প্রবেশ করে বসতঘর ভাংচুর করে।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তান্ডবে উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নে মূলচর গ্রামের নাসির হালদারের বসতঘরের লন্ডভন্ড অবস্থা। ঘরের দরজা, টিনের বেড়া, থাই গ্লাস ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঘরের ভিতরের স্টিল আলমারি, সুটকেসের কাপড়-চোপড় মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।
মূলচর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ নাসির হালদার জানান, আমি সকালে নদীর পাড়ে গেলে ট্রলার চালক হবি হালদার আমাকে জানায়, আলিফ ও তার সহযোগী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ট্রলার চালককে বকাঝকা করেছে। এতে আমি বকাঝকার কারণ জানতে চাইলে ওরা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, এসময় আমি অভিভাবক হিসেবে ওদের শাসন করি। এর জের ধরে আলিফসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মূলচর গ্রামে আমার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তারা ভাংচুর তান্ডব চালিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে স্টিলের আলমারি ও সুটকেসের তালা ভেঙে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও আলু বিক্রির নগদ ২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
ট্রলার চালক বৃদ্ধ হবি হালদার বলেন, আমি পদ্মা নদীতে ট্রলার চালাই। ওরা ট্রলার ঘাটে এসে প্রায়ই নেশা সেবন করে এবং শুধু শুধু আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ওরা আমাকে ট্রলার ঘাটে দেখতে পেয়ে আবারও গালিগালাজ করে। বিষয়টি নাসির হালদারকে জানালে তিনি বকাঝকা করায় মুরুব্বি হিসেবে তাদের চড়-থাপ্পড় দিয়ে শাসন করেন। এর জের ধরে প্রথমে নাসির হালদারের বাড়ি ও পরে আমার বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, এই কিশোর গ্যাং গ্রুপটি চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা প্রকাশ্যে মাদক সেবন ছাড়াও নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। এছাড়া পদ্মা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে হানা দিয়ে টাকাসহ নানা মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য আলিফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী থানার ওসি মহিদুল ইসলাম জানান, শুনেছি ট্রলারঘাটে চড়-থাপ্পড় দেয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।