নিজস্ব প্রতিবেদক
‘দখল যার, জমি তার’ -এই নীতি অনুসরণ করে মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রজতরেখা নদীকে গিলে ফেলেছে নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষেরা। বর্জ্য ফেলে আগেই এই নদীর পানি দূষিত করে ফেলেছে। জেলার ঐতিহ্যবাহী দীর্ঘ নদী হলো রজতরেখা। দীর্ঘকাল থেকে এই নদীটি ছিলো সাধারন মানুষের পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদীতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কাগজে কলমে আর মানুষের মুখে রজতরেখার নাম আজও শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে নদীটির মাত্র কয়েক শত মিটার চিহ্ন বহন করে আছে। তবে যেখানে নদীর চিহ্ন রয়েছে সে স্থানকে একটি ছোট খাল বললেও কোন ভুল হবেনা। এই নদীটি জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়ের পদ্মার শাখা নদী হতে উৎপত্তি হয়ে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার উত্তরে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে। অপরদিকে নদীটির আরেকটি গতিপথ হলো মেঘনা নদীর দিকে। চরাঞ্চলের কংশপুরা গ্রামের মাথা থেকে এই রজতরেখা নদীটি চরকেওয়ার, আধারা ইউনিয়নের চিতলিয়া হয়ে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে কালিরচর হয়ে মেঘনার মোহনায় মিলিত হয়েছে। সেখানেও নদীটি দিনে দিনে সংকীর্ণ হয়ে আসছে। নদীটির ১৫ কিলোমিটার ধলেশ্বরী হতে পদ্মা নদীর টঙ্গীবাড়ীর দিঘিরপাড় নদীটি এখন হারিয়ে গেছে। নদীটি দুটি উপজেলার মধ্যে পড়েছে। এতে করে সীমানা জটিলতায় আজও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি কেউ। বিভিন্ন সময়ে নদীর দুই তীর দখলে চলে যায়। যেখানে নদীর চিহ্ন রয়েছে সেখানে পানি না আসার কারণে শুন্য পরিত্যক্ত জমি হয়ে আছে। নদীতে পলি জমার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রভাবশালী চক্র নদীটির বিভিন্ন স্থানে দখল করে নেয়। নদীর উপর বসতবাড়ী, বহুতল ভবন, দোকান ঘর তুলে দখলে নিয়েছে স্থানীয়রা। নদীর জায়গা জুড়ে রয়েছে হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা। নদীটির প্রবেশ মুখ থেকে রাকিরকান্দি পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার নদীটির চিহ্ন আজও আছে। রাকিরকান্দি গ্রামের অপরপাড়ে দিঘিরপাড় বাজারে শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি স্থানীয়রা নদীটির প্রবেশ মুখ বালু দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে এক প্রভাবশালী নদী ভরাট করে বালুর ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীটির উৎপত্তিস্থল দিঘিরপাড় বাজার ঘেঁষা রাকিরকান্দি গ্রামের শেষ মাথায় নদীটির কিছু অংশে শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা নদীর মুখ বালু দিয়ে ভরাট করে পকেট বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে আসছে রমরমা বালু ব্যবসা। এতে করে ভরা বর্ষায়ও এই নদীর প্রবেশ মুখ দিয়ে পানি আসে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর উৎপত্তিস্থল হতে ১ কিলোমিটার জুড়ে নদীটি দখলে করেছে এক শ্রেনীর বালুদস্যু, বানিয়েছে তাদের বালু বিক্রির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পুরা বাজার এলাকা থেকে রাকিরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার নদী এখন ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি নদীর দু’পাড়ের মানুুষের দখলদারিত্ব। যেন দেখার কেউ নেই ।
স্থানীয়রা আরো জানায়, নদীটির উৎপত্তিস্থল দখলমুক্ত করে পুরো নদীটিতে যেন আবারো পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করে তাহলে নদীটি পুনরায় ফিরবে আগের রুপে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কেবলমাত্র মানচিত্রে স্মৃতির চিহ্ন হয়ে থাকবে এই নদীটি । দখলদাররা জাল দলিল এবং নামজারি করেছে নদীর জায়গা। এলাকার লোক দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। দ্রুত নদীটি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার বলেন, নদীর উৎপত্তিস্থল ভরাট হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে নদীটি দখল হয়েছে। খুব দ্রুত এই রজতরেখা নদীটি দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।