নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি পর্যায়ে ২৩ ক্যাটাগরিতে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কাজ। বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি নির্মাতারা। শুধু তাই নয়, এতে বেড়ে যাবে বেসরকারিভাবে আবাসন কোম্পানির নির্মাণ খরচও।
জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব চৌধুরী আশরাফুল করিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারদের জন্য দুই ধরনের ইট, ৬ ধরনের সিমেন্ট, ৯ ধরনের এম এস রড, ৬ ধরনের বিটুমিনসহ মোট ২৩ ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের সব দফতরের দর তফসিলের জন্য নতুন এই দাম কার্যকর হবে। এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথম শ্রেণির বেশি পোড়া বা ঝামা ইটের দাম ১০ টাকা থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকায়। আর অটোমেটিক মেশিনে তৈরী এক নম্বর গ্রেডের ইটের দাম ১১ দশমিক ৫ টাকা থেকে ৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ টাকায়। মানভেদে ইটের দাম ৩০ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ বাড়িয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নির্মাণ কাজের শিডিউল অব রেট পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের আওতায় ইট ছাড়াও প্রধান নির্মাণ উপকরণ বিটুমিনের দাম ৪২ শতাংশ, সিমেন্টের দাম ২২ শতাংশ ও রডের দাম ২৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বর্ধিত দাম সব দফতরের দর তফসিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে কথা হয় এলজিইডির মুন্সীগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোনায়েম সরকারের সাথে। তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় থমকে গেছে উন্নয়ন কাজ। তবে এলজিইডি মুন্সীগঞ্জ জেলায় যেসব উন্নয়ন কাজ নেয়া হয়েছে তা ঠিকাদাররা চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করছেন বলেও জানান তিনি। কাজের গুণগত মানেরও কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
মুন্সীগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানিয়েছেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে উন্নয়ন কাজে বিঘ্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে মুন্সীগঞ্জ জেলার সড়ক ও জনপথের যেসব উন্নয়ন কাজ চলছে সেগুলো চুক্তিপত্র অনুযায়ী সম্পন্ন করছেন ঠিকাদাররা। ঠিকাদাররা হতাশ হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু করণীয় নেই। চুক্তি অনুযায়ী, সঠিক সময়ে এবং নির্মাণ কাজের মান বজায় রেখেই তা সম্পন্ন করতে হবে। আর সেটাই করছে ঠিকাদাররা।
মুন্সীগঞ্জ জেলার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর ২০২২ সালে যে রেট নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তার সাথে বাড়তি মূল্যের কিছুটা সামঞ্জস্য রয়েছে। এতে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদারদের তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কারণে বাংলাদেশে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে বলে তিনি জানান। এটা শুধু, নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষেত্রেই যে দাম বেড়েছে তা নয়, সব পণ্যের দামই বেড়েছে। এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে এবং উন্নয়ন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি। এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ঠিকাদার আতাউর রহমান নেকী খোকন জানান, বর্তমান বাজারে নির্মাণ কাজের শিডিউলের সাথে নির্মাণ সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক ঠিকাদার কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই ঠিকাদারি পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন বলে তিনি জানান। আর এজন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ অনেকাংশে দায়ী বলে তিনি মনে করেন। এই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের কারণেই চাল থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি এখন নির্মাণ সামগ্রীর দামও বেড়ে গেছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদাররা যাতে কাজে আগ্রহী হন সেজন্য শিডিউলে নতুন রেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তা নির্ধারণ করা হবে। এটা করা হলে ঠিকাদাররা কাজে আগ্রহী হবেন। তিনি জানান, মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণেই নির্মাণ সামগ্রীর দামে এই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, সরকারি পর্যায়ে ২৩ ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম পুনঃনির্ধারণ করায় তা শেষ পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে কর্মরত ঠিকাদারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বেসরকারিভাবে যারা নির্মাণ কাজে জড়িত তাদের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে অ্যাপার্টমেন্টের দামও আরো এক ধাপ বেড়ে যাবে। ক্রেতাদেরকে বেশি দামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে হবে।