নিজস্ব প্রতিবেদক
ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ‘ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩’ থাকলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে মা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের জেলেরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কিছুতেই মানছে না জেলেরা। এই ২২ দিনের জন্য বরাদ্দকৃত চাল যেন সকল জেলেদের হাতে দ্রুত পৌঁছে যায় সেই ব্যবস্থাও করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়া সারা বছরের জেলে ও মৌসুমি জেলেদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে চাঁদপুরের এসব জেলেরা।
দেখা গেছে, হাইমচর ও নীলকমল ইউনিয়নের শিশু-কিশোর ও বয়স্ক ব্যক্তিরা দিনভর নদী থেকে মাছ শিকার করছে এবং স্থানীয় বাংলাবাজার মাঝেরচর ও সাহেবগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশ মাছ বিক্রি করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে মাছ বেচাকেনা করছে। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানের প্রতিদিনই জেলেদের আটক ও জরিমানা করছে। কিন্তু কিছু অসাধু জেলেরা আছে যারা এই আইন কিছুতেই মানছে না। আইন অমান্য করে প্রতিদিনই নদী থেকে মা ইলিশ শিকার করছে। হাইমচর কালীখোলা ঘাটের একজন আড়তদার আহসান বেপারী (৬৭) বলেন, আমি একজন আড়তদার হয়েও ইলিশ মাছ সংরক্ষণ ও বিক্রি করা বন্ধ করে রেখেছি। কিন্তু অনেক প্রভাবশালী আছে যারা এসময় প্রকাশ্যে মাছ কিনছে এবং সংরক্ষণ করে রাখছে অভিযানের পরে যাতে বেশি লাভে বিক্রি করতে পারে। আহসান বেপারী আরও বলেন, প্রতিবছর যখন ইলিশের অভিযান শুরু হয় তখন হাইমচর ও নীলকমল ও ইউনিয়নের অনেক যুবক যারা ঢাকায় কাজ করেন, এই সময় তারা গ্রামে চলে আসেন এবং দিনরাত নদী থেকে ইলিশ মাছ শিকার করেন। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করেন তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণ জানালেন হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের এক জেলে দ্বীন ইসলাম। তিনি বলেন, ২২ দিনের অভিযানে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জেলেরা পাচ্ছেন ১৮ থেকে ২০ কেজি চাল। এ দিয়ে কিছুতেই সংসার চালানো সম্ভব না। তাইতো জেলেরা জীবন রক্ষার্থে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করছে। উপজেলা টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে সর্বত্র সতর্ককরণ ফেস্টুন লাগিয়ে জেলেদের সতর্ক করছে। যেখানে উল্লেখ করা আছে, ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ বাজারজাতকরণ, বিনিময় নিষিদ্ধ। ইলিশ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে এবং সকলকে সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। এই আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে এক বছর এবং সর্বোচ্চ দুই বছরে সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। এরপরও আইন অমান্য করে প্রকাশ্যেই জেলেরা অবাধে মা ইলিশ শিকার করছে।