নিজস্ব প্রতিবেদক
শারদীয় দূর্গোৎসবের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর)। আজ বিজয়া দশমী, দেবী-দুর্গার বিদায়ের দিনে মন্ডপে মন্ডপে বাজছে বিষাদের সুর। শঙ্খ আর ঢাকের ধ্বনি ক্রমশ কমে যাচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন প্রতিমা নিয়ে আসা ট্রাক চলাচলের রুট নির্ধারণ ও বিসর্জনে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিসর্জনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে বিকেলে। এর আগে রাজধানীর ২৪৬টি পূজামন্ডপ থেকে ভক্ত-পূজারিরা এসে জড়ো হবেন পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিতভাবে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। এরপর সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর জলে একে একে বিসর্জন দেওয়া হবে প্রতিমা।
দশমীতে মন্ডপে মন্ডপে হয় সিঁদুর খেলা। পরিবার ও স্বামীর মঙ্গল কামনায় নারীরা একজন আরেকজনের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন। শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার আশীর্বাদ নিতে শিশুরা প্রতিমার পায়ে বই ছোঁয়ায়। জল, পাখার বাতাস আর মিষ্টিমুখ করিয়ে দেবীকে বিদায় জানাবেন ভক্তরা।
রাজধানীতে বিজয়ার শোভাযাত্রা ও বিসর্জনকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, নৌপুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে, বুড়িগঙ্গা, সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে, পুরান ঢাকার পোস্তগোলার শ্মশানঘাট ও লালকুঠির ঘাটে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, পূজার শুরু থেকেই প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তা দিয়েছে পুলিশ। আজ বিসর্জনকে কেন্দ্র করে পুলিশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সারাদেশে বিসর্জনে র্যাব বিশেষ নিরাপত্তা দেবে। নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু করা হবে। অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজও করবে র্যাব। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় এখন পর্যন্ত সফলভাবে র্যাব দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের প্রতিটি এলাকায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। ব্যাটালিয়নের ইউনিট প্রধানরা পূজার নিরাপত্তা পরিদর্শনে যান। র্যাব সদর দপ্তর থেকে এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নৌপুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি যেন না হয় সেজন্য বিসর্জন উপলক্ষে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে প্রতিটি মন্ডপে। বিসর্জনে ঘাটগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি বিসর্জন ঘাটে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। যারা সাঁতার জানে এমন কয়েকজন ছেলেকে বাছাই করা হয়েছে, যাতে কেউ পানিতে ডুবে না যায়। বিসর্জন উপলক্ষে দেশের প্রতিটি স্থানে নৌপুলিশ তৎপর রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দূর্গোৎসবে শুরু থেকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে এবং সেটি কিছুক্ষণের মধ্যে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে। আমরা মনে করি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দূর্গোৎসব শেষ হবে। সবকয়টি মন্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা ছিল। কিছু কিছু জায়গায় আর্চওয়ের ব্যবস্থা ছিল। প্রত্যেক পূজা উদযাপন কমিটির নেতা ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। বিসর্জন কেন্দ্র করে ডিএমপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলয় তৈরি করা রয়েছে।
ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার থেকে পাঁচদিনের যে দূর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সে আয়োজন। দেশজুড়ে ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মন্ডপে পূজা হয়েছে এ বছর।
প্রতিমা বিসর্জনে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা
আগের পোস্ট