নিজস্ব প্রতিবেদক
মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মোঃ মোস্তফা মোল্লাকে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা দেওয়ায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে এলাকার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা জানান, মোস্তফা মোল্লাকে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। ঘটনার দিন মোস্তফা মোল্লা কংসপুরা গ্রামে ছিলেন না। তিনি ছিলেন ঢাকায়। বিএনপির পৃষ্ঠপোষক ও আওয়ামীলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা নিজেরা ওই যুবকদের আহত করে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য মোঃ মোস্তফা মোল্লাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তারা আরো বলেন, আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা মোঃ মোস্তফা মোল্লাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার বিষয়টি আমরা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে জানিয়েছি। তারা ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। জানা গেছে, গত ৩০ জুন বুধবার বিকেলে কংসপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রশিদ হালদার (২৫), আহছান হালদার (২০) ও ইউনুছ হালদার (২০) নামের ৩ যুবককে দুষ্কৃতিকারীরা কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় পরের দিন বৃহস্পতিবার আহত রশিদ হালদারের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রধান আসামী করা করা হয় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মোঃ মোস্তফা মোল্লাকে। এছাড়াও তার ছেলে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজহার মোল্লাসহ ২৪ জনের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদিকে মোল্লাকান্দি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আরো বলেন, কংসপুরা গ্রামের মনু মোল্লা ও আইনউদ্দিন হালদার নিজেদের আধিপত্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তারা নিজেদের গ্রুপের ৩ জনকে কুপিয়ে জখম করেছে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির পৃষ্ঠপোষক ও আওয়ামীলীগ নামধারী মনু মোল্লা ও আইনুউদ্দিন হালদার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মোঃ মোস্তফা মোল্লাসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এদিকে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা মোল্লা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ঘটনার দিন আমি গ্রামে ছিলাম না। ঢাকায় ছিলাম। আমার ছেলে আজহার মোল্লাও ঢাকায় ছিল। গত ১ জুলাই বিকাল ৫টার দিকে আমার ভাগিনা বউ রাসুর ঘরে ঢুকে রামদা দিয়ে মাথায় কোপ মারলে ১২টি সেলাই লাগে এবং আমার ভাতিজা ফজল হক মোল্লার মাথায় রামদা দিয়ে কোপ মারলে মারাত্মক জখম হয়। এছাড়াও অনেক মহিলাকে মারধর করে। আমার ঘরের দরজা ভাংচুর করে বিএনপির সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবাখোর জনি মাদবর, ইউনুস, রশিদ, বাদশাহ, আহছানুল্লাহ, আইনুদ্দিন, মোছলেম, জমু, সালিম, দিলদার, বাবু মাদবর, আসাদ মাদবর, রাকিব, কাউসার, মিল্লাত, বাপ্পী, হৃদয়, রহিমসহ আরো অনেকে। মোস্তফা মোল্লা আরো বলেন, যেকোন সময় আবার ওই সন্ত্রাসীরা আমার ও আমার পরিবারের ক্ষতি করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এদিকে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা মোল্লার নামে মামলা হওয়ায় তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূইঁয়া ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী। আফসার উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, গত বুধবারের কংসপুরা গ্রামের ঘটনাটি দলীয়ভাবেও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে আমাদের সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা মোল্লাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনায় জড়িত করা হয়েছে বলে মনে করছি। অপরদিকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী এ ব্যাপারে বলেন, আমাদের ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপ বলতে কিছু নেই। যারা আওয়ামীলীগ করি সকলের একই দল। মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা মোল্লার নামে থানায় মামলা হয়েছে তা দুঃখজনক। আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এদিকে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা মোল্লা জানান, বিএনপির পৃষ্ঠপোষক মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা কয়েকদিন আগে আমাদের কংসপুরা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে শহীদুল্লাহকে ককটেল মেরে মারাত্মক জখম করে এবং ওই সময় আরও অনেকে আহত হয়। তারপর বীর মুক্তিযুদ্ধা সলিম সরকারের ছেলে হাসান সরকারকে রামদা দিয়ে কোপ মেরে মাথায় মারাত্মক জখম করে এবং তার পা ভেঙ্গে ফেলা হয়। সে পঙ্গু অবস্থায় আছে। এ দুটি ঘটনায় ওই বিএনপির পৃষ্ঠপোষক মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি ও আমার পরিবার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্য ত্যাগী পরিবার। এখনো মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মাদক ব্যবসায়ী আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারই ধারাবাহিকতায় কংসপুরা গ্রামে বিএনপির সন্ত্রাসীদের নিয়ে আওয়ামীলীগের নামধারী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সমন্বয় করে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালিত করা হচ্ছে। এদিকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহিন মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলি আজগর এ ব্যাপারে বলেন, আমাদের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মোস্তফা মোল্লার বিরুদ্ধে যে ঘটনায় আহত রশিদ হালদারের মা রহিমা বেগম সদর থানায় মামলা করেছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও মামলা থেকে মোস্তফা মোল্লার নাম প্রত্যাহার করার দাবী জানাচ্ছি। এদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক এ ঘটনার বিষয়ে বলেন, কংসপুরা গ্রামের ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা মোল্লা জড়িত আছেন কী না এটিও খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ওসি বলেন, বর্তমানে কংসপুরা গ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে পুলিশের পেট্রোল ডিউটি অব্যাহত রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দির কংসপুরা গ্রামে ৩ যুবক আহতের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা মোস্তফা মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা
আগের পোস্ট