নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জে নির্জন বাগান থেকে তালের শ্বাস নেওয়ার কথা বলে অটোচালককে নির্জন বাগানে নিয়ে গলাকেটে হত্যার পর অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামা-ভাগ্নে ২ জনকে ফাঁসি ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সেইসাথে অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় একই আসামীদের আলাদা ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও আরো ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।
গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক বেগম খালেদা ইয়াসমিন ঊর্মি এ রায় দেন।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ মে সকালে নিজ অটো নিয়ে ভাড়ায় চালাতে বের হয় চালক মোঃ সাহাবুদ্দিন শেখ (২২)। সে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাষিরী গ্রামের আবুল শেখের ছেলে। নিহত সাহাবুদ্দিন ২০২০ সালের ২৪ মে সকাল ৮টার দিকে তার অটো বাইকটি নিয়ে বাড়ি থেকে ভাড়ায় চালানোর জন্য বের হয়। পরে তার বাড়ির পাশের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নেত্রাবর্তী গ্রামের মৃত সায়েদ শেখের ছেলে ইলিয়াস শেখ (৩২) ও তার ভাগ্নে পাশের লৌহজং উপজেলর ছত্রিশ গ্রামের মীর হোসেন মুন্সীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৩) সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সানেবান্দা এলাকা হতে ভিকটিম শাহাবুদ্দিনকে ভাড়া করে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কুরমিরা হতে বালিগাঁও বাজারে তালের শাঁস নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভাড়া করে কুরমিড়া গ্রামে নিয়ে যায়। পরে নির্জন বাগানে নিয়ে আসামী ইলিয়াস প্রথমে গলায় গামছা পেঁচিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরে এবং রাকিব নিহতের হাত-পা ধরে রাখে। পরে তাকে ওই নির্জন বাগানের পাশের নিচু জমিতে মৃত ভেবে ফেলে দিলে এই আসামীরা দেখে সাহাবুদ্দিন নাড়াচাড়া করছে। পরে ইলিয়াস নিহতের গলায় দুটি দা দিয়ে কোপ দিয়ে তার শ্বাসনালী কেটে হত্যা নিশ্চিত করে তার ইজিবাইক ও তার পকেটে থাকা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ইলিয়াস মোবাইলটি নিয়ে তার পরিচিত সালাম নামের এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দেয়। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সালামকে পুলিশ গ্রেফতার করলে সে এই মোবাইলটি ১নং আসামী ইলিয়াসের কাছ থেকে কিনেছে বলে জানালে পুলিশ ইলিয়াসকে গ্রেফতার করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আবুল সেখ বাদী হয়ে টঙ্গীবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করে। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করার জন্য মুন্সীগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হলে গোয়েন্দা পুলিশ নিহতের মোবাইলের সূত্র ধরে সালাম নামের ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে সালাম জানায়, সে আসামী ইলিয়াসের কাছ থেকে মোবাইলটি কিনেছে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়। নিহতের অটো কেনাবেচায় জড়িত থাকায় নিহতের বাবা আবুল সেখের মামলায় আরো ২ জনকে আসামী করে পুলিশ। তারা হলো মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের হাজী ইব্রাহিম মাদবরের ছেলে রাকিব মাদবর @ রাকিব (৩২) ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মৃত মতিন সেখের ছেলে ও কবির হোসেনের কাছে বিক্রি করে দেয়। এই আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করে আদালত।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী নিহতের বাবা সাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, আমি রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাই। আমার ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে সাহাবুদ্দিন তৃতীয় ছেলে ছিলো। এই ছেলেটাই আমাকে আয়-রোজগার করে দিতো। আমার সেই ছেলেটারে ওরা মেরে ফেললো। আদালত যে রায় দিয়েছে আমি তাতে খুশি। রায় দ্রুত দেখে যেতে চাই।
নিহতের মা শাহানাজ বেগম বলেন, আমার ছেলেটাকে ওরা মেরে ফেললো। কি দোষ করেছিল আমার ছেলেটা। আমার ছেলেটাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। আমি ওদের ফাঁসি দ্রুত দেখে যেতে চাই।
এ ব্যাপারে নিহতের বোন খাদিজা বলেন, আমার ভাইটাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারছে। এ রায়ে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা দ্রুত ওদের ফাঁসি চাই।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পিপি সিরাজুল ইসলাম পল্টু বলেন, এই মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
মুন্সীগঞ্জে অটোচালককে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় মামা-ভাগ্নের ফাঁসি
আগের পোস্ট