নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ জেলায় এবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলমান বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলায় বন্যার পানির কারণে এ সময়ের মৌসুমী ফসলের বিভিন্ন ধরণের শাক সবজি পানি তলিয়ে যায়। এর ক্ষতির পরিমাণ ২৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এবারের বন্যায় কৃষি কাজ করে ১৩ হাজার ৯শ’ ৩৩ জন কৃষক সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ বিষয়টির চূড়ান্ত হিসাব নির্ণয় করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ক্ষতির কারণে জেলার প্রান্তিক কৃষকরা নানামুখী সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। এদিকে মুন্সীগঞ্জের বাজারে নানা রকমের সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে স্থানীয় বাজারে সকল ধরণের শাক সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ শাক সবজি প্রকারভেদে চড়া দামের মধ্যে ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দামেও বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজারে কচু, শাপলা, সেচি শাক ও কলমি শাকের ব্যাপকতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। মুন্সীগঞ্জের বেশিরভাগ জমিজমা নিচু এলাকায়। সেই কারণে এখানকার বেশিরভাগ ফসলাদি বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জের বাজারে অন্য জেলা থেকে আনা শাকসবজি দিয়ে এখানকার চাহিদা বর্তমানে পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সবজির চড়া দামের কারণে কেনাকাটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। গ্রামগঞ্জের মানুষের নিত্য দিনের খাবারের পাতে বর্তমানে শাপলা, সেচি শাক ও কচু দিয়ে আহার করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় বিভিন্ন রকমের সবজি, আউশ, বোনা আমন, রোপা আমন ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় এই মৌসুমে সবজিতে ১৬৩৫ হেক্টর জমি ও আউশ ধান ২৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে এই উপজেলায় যথাক্রমে সবজি ৭৫ হেক্টর জমি ও আউশ ধান ২৫০ হেক্টর জমির ফসল চলমান বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়। আর তাতে সম্পূর্ণভাবে সবজি ৩৩ হেক্টর জমি ও আউশ ধান ২২১.৫০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানে ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে সবজি ৭০৪ মেট্রিক টন ও আউশ ধান ৯২৮ মেট্রিক টন। এর ফলে এখানে সবজিতে ২ কোটি ৮১ লাখ ৬ হাজার টাকা ও আউশ ধানে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে এবারে চলমান বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজিতে ২২৫ জন কৃষক ও আউশ ধানে ১৩৮৫ জন কৃষক। টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় এবার সবজিতে ৭০১ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ৬ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ৩৩০৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে এই উপজেলায় যথাক্রমে সবজিতে ২০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ৬ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়। আর তাতে সম্পূর্ণভাবে সবজিতে ২০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ৬ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়। এখানে এসব ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে সবজিতে ৪৪০ মেট্রিক টন ফসল, আউশ ধানে ২১ মেট্রিক টন ও বোনা আমন ধান ৭৮০ মেট্রিক টন ফসল। এর ফলে এখানে সবজিতে ১ কোটি ৩২ হাজার টাকা, আউশ ধানে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও বোনা আমন ধানে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে এবারে চলমান বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজিতে ১ হাজার জন কৃষক, আউশ ধানে ৪০ জন কৃষক ও বোনা আমন ধানে ২০ জন কৃষক। শ্রীনগর উপজেলায় এবার সবজিতে ৬০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ১৫ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে এই উপজেলায় যথাক্রমে সবজিতে ৬০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ১৫ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ৩০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়। আর তাতে সম্পূর্ণভাবে সবজিতে ৬০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ১৫ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ৩০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়। এখানে এসব ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে সবজিতে ১২৬০ মেট্রিক টন ফসল, আউশ ধানে ৪৫ মেট্রিক টন ও বোনা আমন ধান ৩০ মেট্রিক টন ফসল। এর ফলে এখানে সবজিতে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আউশ ধানে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও বোনা আমন ধানে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে এবারে চলমান বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজিতে ৯শ’২০ জন কৃষক, আউশ ধানে ১শ’৪৫ জন কৃষক ও বোনা আমন ধানে ২শ’৮০ জন কৃষক। সিরাজদিখানে উপজেলায় এবার রোপা আমনে ৭শ’৫০ হেক্টর জমি, সবজিতে ১ হাজার ২শ’৫০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন বীজতলা ৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে এই উপজেলায় যথাক্রমে রোপা আমন ৭শ’৫০ হেক্টর জমি, সবজিতে ৫০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন বীজতলা ৫০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়। আর তাতে সম্পূর্ণভাবে বোনা আমনে ৪শ’৮৬ হেক্টর জমি, সবজিতে ৫০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন বীজতলায় ৫০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়। এখানে এসব ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে বোনা আমন ১৪৩৪ মেট্রিক টন ফসল ও সবজি ১১০০ মেট্রিক টন মেট্রিক টন ফসল। এর ফলে এখানে বোনা আমনে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সবজিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও বোনা আমন বীজতলায় ৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে এবারে চলমান বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বোনা আমনে ৩ হাজার ৫শ’ জন কৃষক, সবজিতে ৪শ’১৫ জন কৃষক ও বোনা আমন বীজতলায় ২ হাজার ৮শ’ জন কৃষক। লৌহজং উপজেলায় এবার সবজিতে ১০০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ২০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ১৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে এই উপজেলায় যথাক্রমে সবজিতে ৬৫ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ২০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ২৪০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়। আর তাতে সম্পূর্ণভাবে সবজিতে ৭০ হেক্টর জমি, আউশ ধানে ২০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ২৫৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়। এখানে এসব ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে সবজিতে ৭০০ মেট্রিক টন ফসল, আউশ ধানে ১০০ মেট্রিক টন ও বোনা আমন ধান ২৫৫ মেট্রিক টন ফসল। এর ফলে এখানে সবজিতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আউশ ধানে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা ও বোনা আমন ধানে ৯ কোটি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে এবারে চলমান বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজিতে ১ হাজার ৮শ’ জন কৃষক, আউশ ধানে ৫০ জন কৃষক ও বোনা আমন ধানে ২শ’৫০ জন কৃষক। গজারিয়া উপজেলায় এবার সবজিতে ১০৫ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ২২৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে এই উপজেলায় যথাক্রমে সবজিতে ২০ হেক্টর জমি ও বোনা আমন .২৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়। আর তাতে সম্পূর্ণভাবে সবজিতে ৩৩.৫২ হেক্টর জমি ও বোনা আমন ২৩.৬০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়। এখানে এসব ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে সবজিতে ৭৫০ মেট্রিক টন ফসল ও বোনা আমন ধান ১৭.৫৫ মেট্রিক টন ফসল। এর ফলে এখানে সবজিতে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও বোনা আমন ধানে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে এবারে চলমান বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন সবজিতে ৬শ’৫৫ জন কৃষক ও বোনা আমন ধানে ৪শ৪৮ জন কৃষক। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, এবারের বন্যায় মুন্সীগঞ্জে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে এ অধিদপ্তর সরকারের নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।