লাইফস্টাইল ডেস্ক
এখন ব্যস্ততা অনেক। চাকরি বাকরি কিংবা নানা উদ্যোগের সুযোগে আমাদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। কর্মজীবী হিসেবে দিনের অনেকটা সময় আমরা বাড়ির বাইরে থাকি। কর্মজীবী বাবা-মা কিভাবে সন্তানের যত্ন নেবেন তা জানাচ্ছেন থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক নাদিম রেজা।
কালের বিবর্তনে যৌথ পরিবার থেকে একক সংসারের আবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ক্ষণে পুরুষের সঙ্গে নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে চোখে পড়ার মতো। নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ফলে দেশে পুরুষের সঙ্গে বেড়েছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যাও। এখন এমন অসংখ্য দম্পতিরই দেখা মেলে, যারা দুজনই কর্মজীবী। সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, করপোরেটসহ সব সেক্টরেই নারী-পুরুষ সমান হারে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এখন মোট কর্মীর প্রায় ৪৩ শতাংশই নারী, যা পাঁচ বছর আগেও ছিল ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি। আগে মা-বাবার পাশাপাশি সন্তানের যত্নের দায়িত্বে থাকতেন মুরব্বিরা। যৌথ কাঠামোর পারিবারিক পরিবেশ ছিল নিয়মিত চিত্র। আর এখন আলাদা বাস করা কর্মজীবী মা-বাবার অফিস বা ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় সন্তানকে সময় দেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্তান জন্মের পর থেকে শুরু হয় আরেক লড়াই, সেটা বাবা-মা দু’জনের জন্যই। কর্মস্থলের কাজের চাপে বা নানাবিধ ব্যস্ততায় সন্তান ধারণ ও প্রাথমিক লালন-পালনের বিষয়টাই বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলাফল, নিরাপত্তার পাশাপাশি সন্তানের মানসিক বিকাশ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কর্মজীবী মা-বাবারা একটু কৌশলি হয়ে সন্তানের জন্য সময় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মজীবীদের ৯টা-৫টা চাকরি করতে হয়, কোনো কোনো সময় আরো বেশি কর্মঘণ্টা থাকে। ছুটির ক্ষেত্রে কারো সাপ্তাহিক এক দিন, কারো বা দুই দিন ছুটি দেখা যায়। যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, ছুটির দিনসহ ঘর ও অফিসের কাজের সমন্বয়ে একটা দৈনিক রুটিন করে ফেলতে হবে আপনাকে। এতে করে আপনার পরিবারের জানা থাকবে অফিসের কাজ ও বাসার কাজের জন্য কোন্ কোন্ সময় আপনি বরাদ্দ রেখেছেন। নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে সন্তানকে নির্ধারিত একটি দিন দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অফিসের আগে ও পরে সন্তানের খোঁজখবর নিন। কোনোভাবেই যেন তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি না হয়। অফিসে চা বিরতি ও লাঞ্চ বিরতি বলে একটা সময় থাকে। বিশেষ করে কর্মজীবী মায়েরা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেন। সম্ভব হলে অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে পারেন। অফিসের পাশে বাসা হলে, অফিস টাইমে অন্তত দুইবার ১০ মিনিটের জন্য হলেও আপনি আপনার সন্তানকে সময় দিতে পারবেন।
ইন্দোনেশিয়ায় একটা প্রথা চালু আছে, ৮-১০ জন কর্মজীবী মা-বাবা নিয়ে তারা বিভিন্ন সামাজিক দল গঠন করে। একদিন একদিন করে একেকজনের বাসায় সবাই তাদের সন্তান রেখে যান। ফলে মাসে দু-তিন দিন ৮-১০ জন শিশুর দায়িত্ব পালন করেন তারা। বাংলাদেশে এ প্রথা প্রচলিত না হলেও নতুন আইডিয়া হিসেবে এটা গ্রহণ করা যেতে পারে। কর্মজীবী পিতা-মাতার সন্তানকে অফিস সময়ের লালনের সময় অনেকটাই গৃহপরিচারিকা বা নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতা নিতে হয়। নিরাপত্তার জন্য বাসায় একটা ভিডিও ক্যামেরা লাগিয়ে নিতে পারেন। আপনার পাশের ফ্ল্যাটের সমমনা কাউকে ভালো বন্ধু বানাতে পারেন। তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে আপনার বাচ্চার সখ্য উভয়েরই মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে। আপনার বাচ্চা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা কোনো জরুরি কাজের জন্য প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিতে পারেন।
সর্বোপরি, সব অফিসে না হলেও অনেক অফিসেই ডে-কেয়ার থাকে, আবার কর্মব্যস্ত অনেক এলাকায়ই এখন ডে-কেয়ার গড়ে উঠেছে। সেখানেও আপনার সন্তান রাখতে পারেন। সন্তানের বয়স বুঝে আপনার যত্ন নেওয়ার পরিকল্পনা নিতে হবে। তিন বছরের নিচের শিশুদের যত্নে বেশ বেগ পেতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিজের কাজ, নিজের জীবন ও সন্তানকে একসুতোয় বাঁধতে চেষ্টা করুন। সন্তানের খাওয়াদাওয়া ও মানসিক বিকাশে নিজেকে তৈরি করতে হবে। কাজ নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। কাজের আট ঘণ্টার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে হবে। তার মনমেজাজ বুঝে আপনি নিজেকে তৈরি করুন। কোনো কারণে দূরত্ব তৈরি হলে তা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। দাম্পত্যসঙ্গীর সঙ্গে পরামর্শ করে সময় ভাগ করে নিন। সন্তানের বয়স চার বছরের বেশি হলে স্কুল বা প্রি-স্কুলে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তার সামাজিক বিকাশের সুযোগ বাড়বে। স্কুলের সময়টায় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকে বলে কিছুটা কম দুশ্চিন্তা হবে আপনার। সন্তানের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা আলাদা সময় দিন। এতে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া হবে, প্রকৃতিতে হাঁটাচলা কিংবা পার্কে যাওয়ার সুযোগ থাকলে নিজের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
পরিশেষে আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, আর্থিক, সামাজিক, সাংসারিক, অফিস, সন্তান- সব মিলিয়ে কর্মজীবী পিতা-মাতার সময় কাটে নানা ব্যস্ততায়। শত ব্যস্ততায়ও আপনার নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও জরুরি, এটাও কিন্তু ভোলা যাবে না।
যেভাবে সন্তানের যত্ন নেবেন কর্মজীবী বাবা-মায়েরা
আগের পোস্ট