# গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ডকইয়ার্ডে নোঙ্গর করে ঘাতক কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯ পুলিশ সেখান থেকে কার্গোটি আটক করে
# লঞ্চডুবির ঘটনায় ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার
# দূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে প্রধান করা হয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিআইডব্লিউটিএ) ড. আ. ন. ম বজলুর রশিদকে। অপর দুইজনের মধ্যে সদস্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার এবং সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
গতকাল রোববার দুপুরে চর সৈয়দপুরের আল আমিন নগর এলাকায় এ দূর্ঘটনার পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ওই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন বলে জানান উপসচিব আমিনুর রহমান।
কমিটিতে আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে ঘটনার কারণ উদঘাটন, দূর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে দূর্ঘটনার পর ধাক্কা দেয়া সিটি গ্রুপ এর মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯ আটক করেছে নৌ পুলিশ। দুপুরে চর সৈয়দপুরের আল আমিন নগর এলাকায় এ দূর্ঘটনার পরেই ওই কার্গোটি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ডকইয়ার্ডে নোঙ্গর করে। পরে পুলিশ সেখান থেকে কার্গোটি আটক করে।
নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, জাহাজটি আটক করা হয়। তবে এর মাস্টার, ড্রাইভারসহ সকল কর্মী পালিয়ে গেছে।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শীতলক্ষ্যায় কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৬ জনের মধ্যে একজন হাসপাতালে মারা গেছেন। অপর দুইজন নারী, একজন পুরুষ ও দুই শিশু।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শতাধিক যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এম ভি আশরাফ উদ্দিন নামে মুন্সীগঞ্জগামী একটি লঞ্চ যাওয়ার সময়ে এমভি রূপসী-৯ নামের কার্গো ধাক্কা দেয়। কার্গোটি ওই লঞ্চকে ঠেলে অনেক দূর নিয়ে যায়। এতে ওই লঞ্চটি মুহূর্তেই ডুবে যায়।
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি, ঘাতক জাহাজ চালকসহ আটক : নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় এমভি আশরাফ উদ্দিন নামে একটি লঞ্চ ডুবে গেছে। এ ঘটনায় চালকসহ জাহাজের সকলকেসহ জাহাজটি আটক করেছে নৌ পুলিশ। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জাহাজটি মেঘনা ঘাট এলাকা থেকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের এসপি মীনা মাহমুদা।
তিনি জানান, এ ঘটনায় জাহাজ এমভি রূপসী-৯ ও জাহাজটির চালকসহ সবাইকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। মৃত ছয়জনের মধ্যে দুজন নারী, দুজন পুরুষ ও দুই শিশু রয়েছে। দূর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে তাৎক্ষণিক নিহত সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
গতকাল রোববার দুপুরে চর সৈয়দপুরের আল আমিন নগরের ব্রিজের কাছে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত ছয়জনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তিনি হলেন জয়নাল ভূঁইয়া (৫০) তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উত্তর ইসলামপুর, আরিফা বেগম (৩৫), তার শিশু পুত্র সাফায়েত (২) তারা মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার রমজান বেগ এলাকার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় ৭০ জন যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিল এমভি আশরাফ উদ্দিন। পথে এমভি রূপসী-৯ নামে একটি কার্গোবাহী জাহাজ লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি মুহূর্তেই ডুবে যায়। এসময় ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী সাঁতারে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও বাকিরা নিখোঁজ রয়েছেন। তবে লঞ্চে ঠিক কতজন যাত্রী ছিলেন তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ওমর ফারুক বলেন, জয়নাল হার্টের রোগী ছিলেন। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর সাঁতরে তীরে উঠেছিলেন জয়নাল ভূঁইয়া। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই তিনি মারা যান।
বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা বিভাগ) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, একটি জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে গেছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল রোববার দুপুরে চর সৈয়দপুরের আল আমিন নগর এলাকায় এ দূর্ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারীকে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি দূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হবে। এদিকে বিকালের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে নিহত স্বজনদের সহমর্মিতা জানান এ্যাড. মৃণাল কান্তি দাস এমপি, মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র হাজী ফয়সাল বিপ্লব ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসিব সরকার। এই লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন মুন্সীগঞ্জের।