নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ডহরী তালতলা খালে বাল্কহেড চলাচলের হিড়িক পড়েছে। পাড়ের মানুষগুলোর অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছাড়া আর কিছু করার নেই। প্রতিদিন খালে সকাল, বিকাল, রাত মালবাহী বাল্কহেড ৩শত এর বেশি চলাচল করে। এছাড়া খালি বাল্কহেড শত শত চলাচল করতে দেখা যায়। এমনকি প্রতি মিনিটে মিনিটে একটির পিছনে আরেকটি বাল্কহেড চলাচল করতে দেখা যায়।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় খিদিরপাড়া ইউনিয়ন বাসুদিয়া খেয়া ঘাট স্থানে ডহরী তালতলা খালে বাল্কহেড চলাচলের হিড়িক পড়েছে। একটির পর একটি মালবাহী বাল্কহেড চলাচল করছে। প্রচন্ড ঢেউ দু’পাড়ে এসে মাটি ভেঙে পড়ছে। দিন দিন খালের গভীরতা কমলেও আয়তনে বাড়ছে। বাল্কহেডের গায়ে লেখা দেখা যায়, রুবি আক্তার, ফকিস-৩, এমবি মৃধা, এম ০১৪৪৮১ ইত্যাদি। পাড়ের বাড়িঘরের মানুষগুলো শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। অনেকেই কথা বলেছেন তবে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের ভয় যারা ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের। তারা তো খালের পাড়ে বাস করে তাদের যদি কোনরকম ক্ষতি করে।
এলাকাবাসী অনেকেই জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করার জন্য কঠোর অবস্থান নিবে বলে তারা জানতে পেরেছে। অনেকেই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বলে দাবি করেন। ভয়ে আতঙ্কে তাদের দিন কাটছে। প্রভাবশালীরা যদি তাদের কোন ক্ষতি করেন তাহলে তারা কি করবেন এ নিয়ে চিন্তিত। তবে ছোটখাটো নৌযান চলাচলে তাদের কোন আপত্তি নেই। তাদের আপত্তি শুধু বড় বাল্কহেড চলাচলে। নদীতে প্রচুর পরিমাণ ঢেউ হয়, যা তাদের ভিটেমাটি কেড়ে নিতে পারে। অনেকে আবার নদী ভাঙ্গার শিকার হয়েছেন।
গত সপ্তাহে ডহরী তালতলা খালে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ বিষয়ে একটি বৈঠক করা হয়। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল আউয়াল জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুমে ডহরী-তালতলা খালে বাল্কহেড চলাচল বন্ধে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। সেসময় এ কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করেন। বেশকিছু বাল্কহেডকে জরিমানা করা হয়। এরপরও রাতের আঁধারে বাল্কহেড চালকেরা ব্যারিকেড ভেঙে চলাচলের চেষ্টা করে।
চলতি মাসের ৫ তারিখ রাতে উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়নের রসকাঠি এলাকায় একটি বাল্কহেড পিকনিকের একটি ট্রলারকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি সাথে সাথে ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় ৪৬ জন যাত্রীর মধ্যে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল আউয়াল বলেন, এখন থেকে ডহরী-তালতলা খালে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল বন্ধে পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা যৌথভাবে কাজ করবে। আমরা খুব শীঘ্রই খালটিতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করে দিব।