নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ব্যাংক চেক জালিয়াতির অভিযোগে হলদিয়া ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শংকর চন্দ্র ঘোষের সদস্যপদ বাতিলের দাবিতে ঝাড়ুমিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার হলদিয়া বাজারের বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের হলদিয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সাধন সরকারের নামে সোনালী ব্যাংক হলদিয়া বাজার শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। ওই হিসাব থেকে গত ২৪ মার্চ ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করে স্থানীয় হলদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার শংকর চন্দ্র ঘোষ। ঘটনার কয়েকদিন পর সাধন সরকার তার একাউন্ট হতে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পারেন এবং এসময় তিনি শংকর মেম্বারের নিকট থেকে আপোষে টাকা ফেরত পেতে দেন দরবার শুরু করেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। এ ঘটনায় সাধন সরকার গত সোমবার লৌহজং থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরো ভয়ংকর চিত্র। সাধনের স্ত্রী ঝুমুরের কাছে থেকে একটি দলিল বের হয়। তাতে দেখা যায়, সাধনের হলদিয়া বাজারের দোকানঘরখানি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে তার স্ত্রীর নামে দানপত্র হিসেবে লিখে নেয়া হয়েছে এবং দাতা স্বয়ং সাধন সরকার। আর স্ট্যাম্পে সাক্ষী হিসেবে রয়েছে শংকর মেম্বার ও জনৈক জহির। অথচ এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না সাধন সরকার। পুলিশ এসে তদন্তের মাধ্যমে দেখতে পায়, শংকর মেম্বার তার নিজ জিম্মায় চেকের পেছনে স্বাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে ব্যাংক থেকে সাধন সরকারের স্বাক্ষর জাল করে ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। তাছাড়া যে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে দোকানঘরটি দান করা হয়েছে সেখানে শংকর মেম্বারের স্বাক্ষর রয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শংকর মেম্বার জানিয়েছে সে স্বাক্ষরটি তারই। তবে সে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়েছিল। তার এ কথায় পুলিশ অবাক হয় কারণ তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সাদা স্ট্যাম্পে কি স্বাক্ষর দিতে পারে? পরে শংকর মেম্বার ও সাধন সরকারের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে মামলা হবার পর গ্রেপ্তারকৃত আসামী আসামী শংকর মেম্বার ও সাধনের স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টহাজতে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে সাধন সরকার জানান, আমার চেক বই ও ব্যাংকের কাগজপত্র সাধারণত দোকানেই থাকে। কিছুদিন পূর্বে আমার কাছে একটা ফোন আসে বাজারের বিভিন্ন দোকানে চুরি হচ্ছে। এরপর তোমার দোকান টার্গেট। তাই দোকানে জরুরী কিছু থাকলে বাড়িতে নিয়ে রাখো। এ কথায় আমি আমার ব্যাংক একাউন্টের চেক বই ও একটি ডিপোজিটের সব কাগজপত্র বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়ি থেকে কিভাবে আমার চেক শংকর মেম্বারের কাছে গেলো তা বুঝতে পারছি না। ধারণা করছি আমার স্ত্রীর সাথে যোগসাজশ করে শংকর মেম্বার আমার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় প্রাপক হিসেবে আমার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। চেকে আমি কোন স্বাক্ষর করিনি। আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে আমার স্ত্রীর ন্যাশনাল আইডি কার্ডে নাম সংশোধনের জন্য আমি স্বাক্ষর দিয়েছিলাম। ধারণা করছি সেখান থেকে শংকর মেম্বার আমার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। শংকর মেম্বার বলছে, আমার স্ত্রী নাকি চেক নিয়ে এসেছিল যদি তাই হয়, তবে মাত্র ১-২ মিনিটের পথ ব্যাংক থেকে আমার দোকান। আমরা তিন ভাই দোকানে কাজ করি। আমাদের কাছে সে নিজে যেতে পারতো বা ফোন অথবা কাউকে পাঠিয়ে খবর দিতে পারতো। এ থেকে ধারণা করছি, আমার টাকা এ মেম্বারই জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়েছে। তাছাড়া আমার ফিক্স ডিপোজিটের টাকাও তুলে নিতে ব্যাংকে গিয়েছিল এই মেম্বার।
লৌহজং থানার এসআই মো. আবু বক্কর জানান, রিমান্ড পেলে মামলার আরো অগ্রগতি হবে। দোকানঘরটি কিভাবে নোটারী করলো তা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।
লৌহজং থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়বীয় জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সাথে শংকর মেম্বারের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেভাবে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হয়েছে, তাতে পরবর্তীতে ঘটনা অন্যরকম ঘটতে পারতো। ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে মেম্বার, ডিপোজিটের টাকা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, তাছাড়া নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বাজারের দোকানঘরটি জালিয়াতির মাধ্যমে দান দেখানো হয়েছে। যাতে সাক্ষী ছিল ওই মেম্বার। সুতরাং ডিপোজিটের টাকা তুলতে পারলে ব্যবসায়ী সাধনকে গুম-খুনও করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মামলা হবার পর গ্রেপ্তারকৃত আসামী শংকর মেম্বার ও সাধনের স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে গত বুধবার আদালতে হাজির করলে আদালত গত বৃহস্পতিবার ৭ এপ্রিল রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য রেখেছিলো।