নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পালগাঁওয়ে দরিদ্রের সরকারি নলকূপ ধনীদের ঘরে। স্থানীয় এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ। ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য, আমি দিয়েছি আপনার কি?
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বসবাসকারী এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে নলকূপ স্থাপনের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পালগাঁওয়ে একই গ্রামের ১০০ মিটারের কম দূরত্বের মধ্যে ৩টি নলকূপ বসানো হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিশেষ সুবিধা নেয়ার বিনিময়ে ঘর ও বাড়ির অভ্যন্তরে পারিবারিকভাবে ব্যবহার করছেন মোঃ সিরাজ হাওলাদার পিতা- মোঃ মুলাই হাওলাদার ও মোঃ মজিবর মোড়ল এবং মোঃ জলিল শেখ পিতা- মৃত আহমেদ আলী শেখ। তাদের ঘরের মধ্যে নলকূপ বসানো হয়েছে। প্রতিবেশী পরিবারগুলো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু নীতিমালায় বলা হয়েছে, অন্তত ১০টি পরিবারকে নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে নলকূপ স্থাপন করা হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, নলকূপ কোন ঘরে রেখে সকলকে বঞ্চিত করে নিজেরাই পারিবারিকভাবে ব্যবহার করছে। দেখার কেউ নেই।
জলিল শেখের প্রতিবেশী মোঃ আবুল হোসেন জানান, আমি নলকূপ ঘরে নেয়ার সময় অনেক অনুরোধ করেছি আমাকে একটি পাইপ দিয়ে লাইন দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে বলেন, আমি টাকা দিয়ে এনেছি দেয়া যাবে না। সরকারি নলকূপ ধনীদের ঘরে আমরা গরীবরা পাইনা।
গ্রামের বাসিন্দা জামাল পাঠান বলেন, সরকারিভাবে পাওয়া নলকূপ ঘরের মধ্যে বসানো হয়েছে। আমি কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঘরের বাইরে উন্মুক্ত স্থানে বসানোর জন্য অনুরোধ করছি।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা গরীর মানুষ সরকারি নলকূপের পানি পান ও ব্যবহার থেকে বঞ্চিত আছি। প্রাথমিকভাবে নলকূপগুলো বাহিরে বিভিন্ন স্থানে থাকলেও পরে যে যার সুবিধামতো ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়। তবে তিনটি নলকূপের মধ্যে একটি উন্মুক্ত আছে। কষ্ট করে হলেও পানি নিয়ে চলছি। বাকি দুইটি নলকূপ উন্মুক্ত স্থানে বসিয়ে সকল পরিবারের ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ও বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত মোঃ জলিল শেখের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান আমি ঢাকায় থাকি। আমার পরিবারের লোকজন নিয়ে আসবো দেশে। আমার নিজের টাকা খরচ করে মোটর বসিয়ে ঘরে নিয়ে গেছি। বিদ্যুৎ বিল কে দেবে? তাছাড়া মোটর নষ্ট হলে কি করবো? এই ভেবে কাউকে লাইন দিন। চেয়ারম্যান আমাকে নলকূপ দিয়েছে। আমি প্রয়োজনে ফেরত দিয়ে দিব।
অভিযুক্ত মোঃ সিরাজ হাওলাদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এমপি দিয়েছে। আমার ভায়রা ভাই।
এ বিষয়ে গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ সদস্য মোঃ বাদল ফকিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নলকূপটি কোথায় বসানো হয়েছে আমি জানি না। তবে শুনেছি ঘরে বসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোঃ শহিদুল ইসলাম ফকিরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি নলকূপ জলিল শেখকে দিয়েছি, তাতে কি হয়েছে? আপনার কি সমস্যা? আপনি মঙ্গলবার দেখা করবেন আমার সাথে আপনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেয়। এরপর চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
লৌহজং উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নলকূপ ধনীদের ঘরে বিষয়টি জানালে, বিষয়টি তিনি অবগত নয় বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। রবিবার সকালে সরেজমিনে তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।