লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এ দেশের দামাল ছেলেরা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ছিনিয়ে আনেন তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা। সেই বাংলার মাটিতে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা যেন অস্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন না করেন সেজন্য জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যেই সব মুক্তিযোদ্ধার ভাতাও বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে সারা দেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জ লৌহজংয়ে প্রথম ধাপে ঘর পেলেন ১১ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গৃহায়ণের কাজ চলমান রয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের সূত্রে প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বমোট বীর নিবাস পেয়েছেন ৪১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও তার পরিবার।
জানা যায়, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাদের নিজস্ব জমি থাকতে হবে। এই বাড়ির নাম হবে বীর নিবাস। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালে অক্টোবরের মধ্যে এই বাড়ি নির্মাণ শেষ করা হবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে একটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হবে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৪২ টাকা। আরো তথ্য জানা যায় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সারাদেশের উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করা হয়।
লৌহজংয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের দ্বিতীয় ধাপে ২৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ঘর পেলেন তাদের মধ্যে কলম ইউনিয়ন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফারুক চাকলাদার, মো. আব্দুল ছালাম বাহার, মো. শাজাহান শেখ।
তিনি বলেন, আমি চির কৃতজ্ঞ আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেই সাথে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির কাছেও কৃতজ্ঞ। জীবনের শেষ মুহূর্তে মাথা গোঁজার আশ্রয় পেলাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। দু’বেলা খেয়ে ভরন-পোষণ করে ঘরের অভাব ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ঘর পেয়েছি মাথা রাখার জায়গা হয়েছে। এখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগেও শান্তি পাব। কলমা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. রফিক শেখের স্ত্রী হাসিনা বেগম মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছি বলে আবেগে কেঁদে ফেলেন।
বেজগাঁও কুড়িগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. নুর ইসলাম খানের স্ত্রী মাজেদা বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। ঢাকায় গিয়ে ভাড়াবাড়িতে থেকে সন্তানদের নিয়ে কষ্ট করেছি। সরকার মুক্তিযোদ্ধা ঘর দিবে শুনে আবেদন করে ঘর পেয়েছি। বর্তমানে ঘরের কাজ চলমান। তবে এখন থেকে নিজের মনে আনন্দ লাগছে। আমি মাথা গোজার ঠাঁই পেলাম।
তার মত বৌলতলী দক্ষিণ চারগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শ্রী নিতানন্দ বিশ্বাস এর স্ত্রী আলো রানী বিশ্বাস বলেন, শেষ বয়সে আমি ও আমার সন্তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে কৃতজ্ঞ সকলের প্রতি।
লৌহজং প্রকল্প উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জয়েন আলী জানান, মুক্তিযোদ্ধা ঘর নির্মাণ কাজ সিডিউল মোতাবেক হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ এখনও আমরা পাইনি। আমরা নিয়মিত নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করছি। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই প্রথম ধাপের ঘরের রং করাসহ বাকী কাজ সম্পন্ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হস্তান্তর করবো।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল আউয়াল জানান, সরকারের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। দীর্ঘদিন পর হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। তিনি আরো জানান, ঘর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের শতকরা ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজও শুরু করা হয়েছে। এ ঘরগুলোর কাজ প্রায় ৬৫ ভাগ শেষ হয়েছে। এসময় তিনি আরো জানান, কিছু ঘরের কাজ মুক্তিযোদ্ধাদের পারিবারিক এবং জমিসংক্রান্ত ঝামেলা থাকায় কাজ এখনো করা সম্ভব হয়নি।