নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়ায় গত ২ দিন যাবৎ হঠাৎ নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বেজগাঁও-গাঁওদিয়া এলাকার বেড়ি বাঁধটি ভেঙে যাচ্ছে। এতে করে এলাকার ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দীর আশঙ্কায় ভুগছে। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল আউয়াল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া ১নং পশ্চিমপাড়া নদীর পাড়ের বেড়ি বাঁধের রাস্তার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার মানুষের সহযোগিতায় বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে ভাঙ্গন কবলিত স্থানে। তবে ভাঙ্গন নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে নানা অভিযোগ। তারা জানান, শুকনো মৌসুমে রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটিকাটা হয়। বালিখোর, ভূমিদস্যুদের কারণেই ভাঙ্গন হয় বর্ষায়।
স্থানীয় মুদি দোকানদার মোহাম্মদ করিম মৃধা জানান, কিছু স্থানীয় লোকজন শুকনো মৌসুমে এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে। বর্ষার মৌসুমে পানি এসে সামনে যে অংশটুকুতে মাটি ছিল তাও নদীতে ভেঙে নিয়ে গেছে। গত দু’দিন বর্ষা ও প্রবল বাতাসে নদীর পানির ঢেউয়ে বাঁধের অংশ ভাঙ্গা শুরু করেছে। গত দু’দিন প্রচন্ড বাতাস ছিল। থেমে থেমে হয়েছে বৃষ্টি। তবে আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানিয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল মাদবর জানান, গাঁওদিয়া পশ্চিমপাড়ার এই অংশে তিন হাজার ভোটার। পাশেই রয়েছে বেজগাঁও ইউনিয়নের অসংখ্য বসতি। উত্তর পাশে যেসকল বসতবাড়ি আছে যদি এই বেড়ি বাঁধটি ভেঙে যায় তাহলে পানিবন্দী হয়ে থাকতে হবে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসে এই বেড়ি বাঁধের অংশটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা বিদ্যুৎ বলেন, আমরা একবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছিলাম। আবার এই বাড়িটি করেছি বেড়ি বাঁধের কাছে। যদি এই বাড়ি ভেঙে যায় তাহলে নিঃস্ব হয়ে যাব। সম্বল বলতে কিছুই থাকবে না। যখন নদী ভাঙ্গন শুরু হয় এই বেড়ি বাঁধের মাটি ভাঙতে শুরু করে। আমি বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাদের এখানে এসেছিল।
তার সাথে সাথে মমতাজ বেগম জানান, সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছে কাদের জন্য? যদি নদী ভেঙ্গে বাড়িঘর ভেঙ্গে যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এগুলো আগেই দেখা উচিত ছিল। তারা কি বোঝেনা কোথায় ভাঙতে পারে পানি আসলে?
স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর মাদবর জানান, পানি উন্নয়নের বোর্ড থেকে ভাঙ্গন এলাকায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫০টির মত ব্যাগ ভাঙ্গন অংশে ফেলা হয়েছে। আরো আনতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে শ্রমিকরা গিয়েছে। ভাঙ্গন স্থানে ১৩০টি বালি ভর্তি ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে অংশগ্রহণ করছে।
এছাড়া এলাকার নারী-পুরুষ সকলের দাবি একটাই, নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টা। তারা আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ভাঙ্গন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, নদী ভাঙ্গন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমরা যদি পানিবন্দী হয়ে যাই তাহলে আমাদের অনেক কষ্ট হবে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে যাবে। ফসলি জমি নষ্ট হবে। অনাহারে কাটাতে হবে দিন-রাত। এছাড়াও আমাদের গৃহপালিত পশু পানিবন্দী হয়ে ক্ষতিসাধন হতে পারে।
গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য হাজী মোঃ তোবারক ঢালী বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভাঙ্গনের সাথে সাথে আমাদের এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান এবং দ্রুত বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধের অনুরোধ করেন। কাজগুলো আমাকে দেখতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ভাঙ্গন এলাকায় যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সহযোগিতা করবেন।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল আউয়াল বলেন, সকালে আমি ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এটা প্রকৃত নদী ভাঙ্গন নয়। প্রচন্ড বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের কারণে বেড়ি বাঁধের অংশটি ভেঙে গেছে। তবে আমি তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে একটি প্রতিরোধ বাঁধ ওখানে গড়ে তুললে আশা করি ভাঙবে না।