নিজস্ব প্রতিবেদক
গতকাল রবিবার ৮ই আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় ‘সংকটে, সংগ্রামে নির্ভীক পথযাত্রী’ শিরোনামে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সভাপতিত্বে এক ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন পিপিএম, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সভ্যতার আলো পত্রিকার সম্পাদক মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ছিলেন। অপরদিকে তিনি ছিলেন বাঙালির সকল লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী মহিয়সী নারী। ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়ার সন্তান শেখ মুজিব ধীরে ধীরে শুধুমাত্র বাঙালি জাতির পিতাই নন, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন, তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁরই সহধর্মিণী, মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো লেগে থেকে তাঁর প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারবার পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি জীবন-যাপন করছিলেন, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতেন। বিশেষ করে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় যখন তাঁর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে দলের কিছু কুচক্রী স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তির সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই মহীয়সী নারী ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে সপরিবারে খুনিচক্রের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন সহজ সরলা নির্মোহ, নির্লোভ, নিরহঙ্কারী মহিয়সী একজন নারী। অর্থ, বিত্ত-বৈভব, গাড়ি, বাড়ি, অলঙ্কার, ক্ষমতার প্রতি ছিল না ন্যূনতম আগ্রহ। তিনি সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর ন্যায় তারও চিন্তা জগত জুড়ে ছিল এদেশের মানুষ।
তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। দেশমাতৃকার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের ১৪টি বছর কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দি ছিলেন। বেগম মুজিব কারারুদ্ধ বঙ্গন্ধুকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আন্দোলনেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। একদিকে অত্যন্ত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সন্তানদের নিয়ে সংসার চালিয়েছেন অন্যদিকে কারারুদ্ধ স্বামীর সামনে সাংসারিক অনটনকে সামনে না নিয়ে এসে দেশের মানুষের পক্ষে অনড় থাকতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তিনিও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মতো দৃঢ়চেতা, আপসসীন মানুষ। চরম অনটন, টানাপোড়েন, ভয়-ভীতি কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনিও বঙ্গবন্ধুর ন্যায় বাঙালি জাতির অধিকারের প্রশ্নে অটল, অবিচল, আপসহীন ছিলেন। বেগম মুজিব ছিলেন জাতির পিতার আমৃত্যু সঙ্গী, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসহ সকল সোনালী অর্জনের নেপথ্য প্রেরণাদাত্রী। যত কষ্টই হোকÑ বঙ্গবন্ধুকে বলেননি যে, রাজনীতি ছেড়ে দাও বা সংসারের খরচ দাও। মেয়েদের অনেক আকাক্সক্ষা থাকে স্বামীদের কাছ থেকে পাবার। শাড়ি, গহনা, বাড়ি, গাড়ি, কত কিছু! কিন্তু এসব লোভ-লালসা কোন কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সাথে নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করে গেছেন। আজকের এই দিনে আমাদের কামনা মহান সৃষ্টিকর্তা তার রূহের মাগফিরাত দান করুন।