নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার আগে সবচেয়ে ব্যস্ততম ঘাট ছিলো শিমুলিয়া ঘাট। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুট দিয়ে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াত করতেন। যার দরুণ হাজার হাজার যাত্রীর পদচারণা ছিলো। শিমুলিয়া ঘাটের যে কয়টি বাস কোম্পানি রয়েছে তার কোনোটিকেই বসে থাকতো হতো না। গড়ে একেকটি বাস দিনে ঢাকা-শিমুলিয়া রুটে ৫/৬ সিঙ্গেল ট্রিপ দিত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ বঙ্গের কোনো যাত্রীকেই শিমুলিয়া ঘাটে আসতে হয়না। তারা সরাসরি তাদের গন্তব্য বাসের মাধ্যমে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করছেন। যাত্রী শূন্যতায় বাস বন্ধ রয়েছে। বাস বন্ধ থাকায় আয়ের পথ বন্ধ রয়েছে। যার দরুণ বাস স্টাফেরা জীবিকা নির্বাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
শিমুলিয়া নৌ-বন্দর বাস টার্মিনালে ১৫টি কোম্পানির প্রায় ৫০০টি বাস রয়েছে। একেকটি কোম্পানিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন স্টাফ কাজ করে। ঢাকা-মাওয়া রুটের বাস কোম্পানিগুলো হলো বসুমতি, স্বাধীন এক্সপ্রেস, প্রচেষ্টা, ইলিশ, ডিএম, গ্রেট বিক্রমপুর, তিশা গোধুলী, আপন, এফআর, বিআরটিসি, শরীয়তপুর পরিবহন, শরীয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলস ও গুনগুন। এই বাসগুলো মাওয়া হতে ঢাকার গুলিস্তান, গাবতলী, মিরপুর, উত্তরা, আব্দুলাহপুর ও মাওয়া হতে যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর পর্যন্ত যাত্রী সেবা দিতো।
যাত্রী শূন্যতায় বাস চলছে না। আর বাস না চললে আয় হবেনা। আয় না হলে খাবার জুটবেনা। মানবতার খাতিরে অনেক স্টাফ কাজ না থাকা সত্ত্বেও বাস কোম্পানির সাথে আছেন। কারণ এতোদিন তাদের দ্বারা রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হয়েছে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে সুসময়ে ছিলাম এখন দুঃসময়েও তাদের সাথে থাকবো। আশা করি, আমাদের বাসের সুদিন ফিরে আসবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই, আমাদের পদ্মা সেতু পার হওয়ার পারমিট যেনো দেন।
বসুমতি পরিবহন লিমিটেডের সুপারভাইজার মো. রানা শেখ জানান, বসুমতির বাস ৪৫টি। স্টাফ সংখ্যা ২১৫ জন ও ৫০ জনের মত স্পেয়ার। আমাদের অবস্থা খারাপ, গাড়ী অচল। দৈনিক ৯টা গাড়ি চলছে তাও যাত্রী শূন্য। আগে ৪৫টি গাড়ি চলতো। একেকটি ৫/৬টি সিঙ্গেল ট্রিপ দিতে পারতো। এখন সর্বসাকুল্যে ৯টি সিঙ্গেল ট্রিপ দিতে পারছি তাও আবার আসন সংখ্যার চাইতে কম। তিনি আরও বলেন, এমতাবস্থায় আমি ও আমার মতো যারা বাসের স্টাফ হিসেবে আছে সবার রুজি-রোজগার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। আমি একজন বাসের সুপারভাইজার হিসেবে সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আমাদের পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ করে দিলে আমরা আমাদের রুজি-রোজগার করে খেতে পারবো।
স্বাধীন এক্সপ্রেসের ড্রাইভার মো. মজিবর বলেন, দেড় বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ৪ বার ট্রিপ দিতে পারতাম। এখন সেতু চালু হওয়ায় একটি ট্রিপ দিতেই কষ্ট হচ্ছে। যাত্রীরা সব সরাসরি সেতু হয়ে পার হওয়াতে ঘাটে ওপারের যাত্রী নেই বললেই চলে। মাঝিরকান্দি ঘাট হতে লঞ্চ ও স্পিডবোট করে কিছু যাত্রী পার হচ্ছে। এই যৎসামান্য যাত্রী নিয়েই সারাদিন কোনোরকম ট্রিপ দিচ্ছি আমরা ও বিভিন্ন বাস কোম্পানি। বসুমতি পদ্মা সেতু পারাপার করবে খুব শীঘ্রই।
মাওয়া বাস ও পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. মুরাদ খান জানান, ঘাটে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৪৫০টি বাস রয়েছে। যাত্রী শূন্যতায় তা বেকার পড়ে আছে। যা যাত্রী হয় তা নিয়েই গাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। তবে শীঘ্রই আমরা ঢাকা হতে শরীয়তপুর, ভাঙ্গা, বরিশাল, কুয়াকাটা ও খুলনা রুটে বাস চালু করতে যাচ্ছি। রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেছি। তবে রুট পারমিটের বড় প্রতিবন্ধকতা পদ্মার ওপাড়ের বাসগুলো। তারা আমাদের মাওয়া প্রান্তের বাস দেখলে ড্রাইভারদের উপর আক্রমণ, গাড়ির কাগজ রেখে দেওয়া, যাত্রী না নিতে দেওয়া ও বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের মাওয়া প্রান্তের বাস কোম্পানিগুলো হতাশায় রয়েছে। তবে আমি মনে করি, শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধান হবে। ওপারের বাস মালিকদের সাথে আলোচনা চলছে।
শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী শূন্যতায় জীবিকা নির্বাহে অনিশ্চতায় ভুগছে বাসস্টাফ
আগের পোস্ট