৬৫ লাখ টাকার ভবনের কাজ ঠিকাদারের গাফিলতিতে এক বছর ধরে পড়ে আছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : জরাজীর্ণ টিনের চালার নীচে চলছে শিশুদের পাঠদান। নেই পর্যাপ্ত কক্ষ, বিদ্যুৎ ও পানি। অসুস্থ ও গরমে অতিষ্ঠ হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। প্রায় ৬৫ লাখ টাকায় বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরীর কাজ এক বছরেও ঠিকাদারের গাফিলতিতে শেষ করতে পারেনি। অথচ একই সাথে শুরু হওয়া উপজেলার আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শেষ করে এখন পাঠদান চলছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ব্রা²নখোলা গ্রামের আনোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই অবস্থা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকিতে অবহেলা।
শ্রীনগর উপজেলার ৯৬ নং আনোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। এটি জাতীয়করণ করা হয় পহেলা জানুয়ারী ২০১৩ সালে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা মরহুম আলাউদ্দিন খান ৫৪ শতক জমি দান করেন। জমির উপর ২০১৭ ও ২০১৮ অর্থবছরে ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮ শত টাকা ব্যয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ভবনের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিকদার এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। চলতি বছরের ২১ মে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও গত ৬ মাস ধরে ঠিকাদার কাজটি করছে না। শুধু ব্যাজের কলামের রড বাঁধাই করে ঠিকাদার আর কোন কাজ করেনি এ বছর। পুরনো জরাজীর্ণ টিনের ঘরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২ শিফ্টে গাদাগাদি করে লেখাপড়া করছে। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কোন কোন সময় শিক্ষার্থীরা। পানি পান করতে হলে পাশের মসজিদের টিউবওয়েলে যেতে হয় শিশুদের। শৌচারগারও নেই, বিদ্যালয়ের ঘন্টা বাঁধার মত ব্যবস্থা নেই। প্রধান শিক্ষক অফিস করছেন পাশের মসজিদ সংলগ্ন মৃত ব্যক্তিদের লাশ বহনকারি খাট রাখার কক্ষে। বিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায়, বেহাল দশার কারণে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ও একজনকে ডেপুটিশনে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষে চলছে পাঠদান।
শিক্ষার্থীরা গরমে অতিষ্ঠ, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, কক্ষ সংকট ও জরাজীর্ণ এবং তাদের অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া করতে হচ্ছে বলে শিশুরা জানায়।
প্রধান শিক্ষক সাহেনা আক্তার জানান, প্রচন্ড রোদের তাপে বাচ্চারা লেখাপড়া করতে পারছে না। তিনি এক বছর ধরে এখানে আছেন, নুতন ভবনের কাজ যেমন দেখেছেন তেমনি আছে। এ সব কারণে অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয় কমিটির সদস্য আক্তারুজ্জামান খান সোহেল জানান, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে শিক্ষারমান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। ৩/৪ শত ছাত্রছাত্রী কমেগেছে। ভবনের বিষয়ে বারবার কমিটির লোকজন ও প্রধান শিক্ষক উর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারাও চেষ্টা করে ব্যার্থ হচ্ছেন।
শ্রীনগর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জানান, আমরা ঠিকাদারকে নিয়ে মিটিং করেছি। ৪০% কাজ হয়েছে। সে দুই মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করে দিবে। সে কাজটি ডিলে করায় তাকে চুড়ান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে।
শ্রীনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস ছুটিতে থাকায় তার সাথে কথা বলা যায়নি। সহকারি শিক্ষা অফিসার আজমল হোসেন জানান, অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে। বিদ্যালয় কমিটি ও আমরা প্রকৌশল বিভাগকে প্রতিবেদন দিয়েছি। মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করব কেন কাজটি হচ্ছে না।