নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক অসহায় মা। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শ্রীনগর প্রেসক্লাবে উপজেলার সেলামতি স্বাগতমপাড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা ফাতেমা বেগম (৫০) এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমা বেগম জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে তার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে তাদেরকে ফেলে রেখে চলে যায়। একজন গৃহিণী হিসেবে ওই সময় ছোট ছোট ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়ে যান তিনি। নিরুপায় হয়ে সন্তানদেরকে নিয়ে ভাইদের সংসারে এসে আশ্রয় নেন। ভাইয়েরা তাকেসহ সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে থাকেন এবং বাড়ি করার জন্য জায়গা লিখে দেন। পরবর্তীতে ভাইদের সহযোগিতায় তিনি দুবাই চলে যান। সেখানে ১০ বছর কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে টাকা রোজগার করে ২ ছেলেকে দুবাই নেন। ছেলেদেরকে দুবাই রেখে অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি দেশে চলে আসেন। ছোট ছেলে ফারদুলকে দুবাই নেওয়ার কিছুদিন পর কাউকে না জানিয়ে হুট করে দেশে চলে আসে এবং বিয়ে করে। পরে সে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। ফারদুলের বিয়ের সময় করা ঋণ পরিশোধ ও ফারদুলের মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য এনজিও পপি ও জাগরণী থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে ফারদুল কৌশলে তার জমি লিখে নেয়। পরবর্তীতে জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে বড় ছেলে আমজাদ তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। মায়ের উঠানো ঋণের টাকায় ফারদুল মালয়েশিয়া চলে যায়। কথা ছিল সেখানে গিয়ে ফারদুল এনজিও ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করবে। সে বেশ কিছুদিন কিস্তির টাকা পরিশোধ করলেও পরবর্তীতে তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের পরামর্শে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে বউ-শাশুড়ির মধ্যে ঝগড়া বাঁধলে ছেলের ভাই তাকে মারধর করে। লজ্জায় ঘৃণায় সে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নেয়।
ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছোট ভাই রাসেল আমাদের বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলে সে আমার পক্ষ নিয়েছে মনে করে আমার পুত্রবধূ মাহমুদা বাদী হয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। ছেলের পরামর্শে মাহমুদা আমাদের বাড়ি ছেড়ে দেউলভোগ এলাকায় ভাড়া থাকতে শুরু করে। ফাতেমা বেগম আরো জানান, ছেলে ফারদুল কিস্তির টাকা ও তার ভরণপোষণের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এনজিও’র অনবরত চাপের কারণে দিশেহারা মা ফাতেমা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েন। নিরুপায় হয়ে ভাইদের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। একপর্যায়ে কোন উপায় না দেখে তিনি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বসতঘর বিক্রি করে দেন। ঘরটি ভেঙ্গে নেওয়ার দিন পুত্রবধূ ভাড়া করা লোকজন নিয়ে বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়া লোকজন আমাকে মারধর শুরু করে। নিরুপায় হয়ে আমি আমার ভাই রাসেলকে ফোন দেই। এসময় ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিক আব্দুর রকিব ও অমিত খান সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের উপস্থিতি দেখে ভাড়াটিয়া বাহিনী সটকে পড়ে। পরবর্তীতে পুত্রবধূ মাহমুদা আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ করে।
বিষয়টি নিয়ে শ্রীনগর থানা পুলিশ দুই পক্ষকে ডেকে সালিশ মীমাংসায় বসে। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে পুত্রবধূ আদালতে ফাতেমা বেগমের ভাই রাসেল, ভাতিজা ইব্রাহিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করে। মামলায় রাসেল গ্রেফতার হয়ে হাজতে রয়েছে। পুত্র ও পুত্রবধূর এমন অন্যায় অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে ফাতেমা বেগম প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।