নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য নাজিম সরদারের বিরুদ্ধে অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এতে ভরাট করা হচ্ছে ফসলী জমি ও জলাশয়। অন্যদিকে এ ভরাট বাণিজ্যে অত্র এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট কেটে ও ছিদ্র করে ড্রেজার পাইপের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নাজিম সরদারের নেতৃত্বে এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী ড্রেজার সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভাগ্যকুল ও পার্শ্ববর্তী রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ফসলী জমি, জলাশয়, পুকুর ও খাল ভরাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সিন্ডিকেটটি প্রভাব খাটিয়ে ফসলী জমি, স্থানীয় রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, সেতু/কালভার্ট ব্যবহার করে ড্রেজারের দীর্ঘ পাইপ লাইনের সংযোগ দিয়েছে। এসব ড্রেজার লাইন থাকার ফলে ভরা কৃষি মৌসুমে জমিতে হালচাষ করাসহ ফসল আবাদে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়াও ভাগ্যকুল-মান্দ্রা বেড়িবাঁধ ও কবুতর খোলা-তিন দোকানের সংযোগ রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে ছিদ্র করে ও কেটে এসব ড্রেজার পাইপের সংযোগ দেওয়ার দৃশ্যমান চিত্র চোখে পড়েছে। মাঝেমধ্যেই উপজেলা প্রশাসনকে দেখা যায় ড্রেজার পাইপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে। তবে ক’দিন বাদেই ফের চালু হয়ে যাচ্ছে এসব ড্রেজার। এতে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ড্রেজার ব্যবসায়ীদের খুঁটির জোর কোথায়? ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ প্রভাবশালী ড্রেজার সিন্ডিকেটের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারায় নিরবে তা চোখ বুঝে সহ্য করছেন।
নদীর পাড়ে ফকির বাড়ির বসবাসকারীরা অভিযোগ করেন, দিনরাত সমান তালে ড্রেজারের বিকট শব্দে শিশুদের লেখাপড়াসহ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বাড়ির ওপর দিয়ে প্রাচীর ভেদ করে ড্রেজারের সংযোগ দিয়েছে। শিশু, বৃদ্ধসহ মানুষের হাঁটা, চলাফেরায় এসব মোটা মোটা পাইপ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। কি করবো অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্যকারীদের অন্যায় অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। কার কাছে বলবো?
সচেতন মহল মনে করছেন, উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য ড্রেজার রয়েছে। এসব ড্রেজারে অবাধে ফসলী জমি কাটার পাশাপাশি ভরাট করা হচ্ছে। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ড্রেজার উচ্ছেদ করলেও ফের চালু হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন তাহলে বেপরোয়া ড্রেজার ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। তা না হলে এ অঞ্চলে ফসলী জমি, জলাশয় ও পুকুর কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। একসময় সবই ভরাট হয়ে যাবে। এতে করে একদিকে যেমন এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। অপরদিকে কৃষিতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে শঙ্কা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নওপাড়ার চক থেকে ভূমি কর্মকর্তা একটি ড্রেজার লাইন বিচ্ছিন্ন করেন। এসময় ড্রেজার সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য আলমগীর হোসেন সটকে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে ছাড়পত্রবিহীন এসব ড্রেজারের ভয়াবহ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। দেখা যায়, পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা ভাগ্যকুল-মান্দ্রার বেড়িবাঁধের পাশে ফকিরবাড়ি সংলগ্ন অবৈধভাবে বসানো হচ্ছে ড্রেজারের ২টি সাব-স্টেশন। বিশাল বাল্কহেড থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এসময় শ্রমিকরা জানায়, ড্রেজার ২টি নাজিম সরদারের। অপরদিকে মান্দ্রার দিকে যেতে ফসলী জমির ওপর দিয়ে বেড়িবাঁধ ছিদ্র করাসহ মানুষের বসতবাড়ি ব্যবহার করে লোহার পাইপের ১টি সংযোগ লাইন বেড়িবাঁধের উত্তরদিকে নেওয়া হয়েছে। একই বেড়িবাঁধের (রাঢ়ীখালের কবুতর খোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়) আনছার বাড়ির সামনে রাস্তা ছিদ্র করে প্লাষ্টিক পাইপের ১টি লাইন নেওয়া হয়েছে। তার সামান্য পূর্বদিকে (কবুতর খোলা ৩নং ওয়ার্ডের যুবলীগের অফিস সংলগ্ন) বেড়িবাঁধের সামান্য নিচ দিয়ে ছিদ্র করে একই সাথে ৩টি ড্রেজার পাইপের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বাঁধটি দেবে যাওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাঢ়ীখালের কবুতরখোলায় এসব ড্রেজারের নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা সৈকত। তারা বলেন, কবুতর খোলা ও তিন দোকানের (সবুজ গ্রাম) সংযোগ রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র করা হয়েছে। যত্রতত্রভাবে ফসলী জমির ওপর দিয়ে ড্রেজারের লাইন টানা হয়েছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা ধানি জমিতে হালচাষ ও কৃষিকাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সৈকত খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এখানে ১টি ড্রেজার, এখন তা বন্ধ আছে। বাকিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
ভাগ্যকুলের সাবেক ইউপি সদস্য নাজিম সরদারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাগ্যকুল মান্দ্রায় ফকিরবাড়ি কিছুদিন হল ১টি ড্রেজার এনেছি। আরেকটি আগেই ছিল। এটা জাহাঙ্গীর, অপু সরদার, আলী বেপারী গংসহ আমি যৌথভাবে চালাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক জানান, খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।