নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের উমপড়ায় অবৈধভাবে ভরাট বাণিজ্য চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন নিরবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ফসলি জমি, জলাশয় ও পুকুর। আর এসব ভরাটে ছাড়পত্রবিহীন ড্রেজার স্থাপন করার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন কৃষিজমি ও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা-পাকা সড়কের ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। মাটিখেকোদের এমন কর্মকান্ডে জনসাধারণের ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। ষোলঘর এলাকার উমপাড়ার বটতলা মামুনের চাতালের পাশে মো. মফিজ ও মধ্য উমপাড়ার মো. রাসেল সড়কের পাশে ড্রেজার স্থাপন করে দেদারছে ভরাট বাণিজ্য চালাচ্ছে। আর এসব অবৈধ ড্রেজারের সংযোগ দিতে উমপাড়ার শাখা রাস্তার কয়েকটি স্থান ছিদ্র ও কাটার পাশাপশি যত্রতত্রভাবে রাস্তার ওপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ লাইন নিয়েছে তারা। এতে সরকারের নির্মিত গ্রামীণ রাস্তার অবকাঠামো নষ্টের পাশাপাশি জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগের সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়েও যত্রতত্র ড্রেজার বাণিজ্যের চিত্র চোখে পড়েছে। দেখা গেছে, ষোলঘরের ৮নং ওয়ার্ডের উমপাড়ার বটতলায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে সার্ভিস লেনের পূর্বপাশে ওই এলাকার মফিজের মালিকানা ১টি ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে। ড্রেজারে শ্রমিদের কাজ করতে দেখা যায়। এখানে ড্রাম ট্রাক দিয়ে দূর থেকে বালু এনে ফেলা হচ্ছে। ভারি ড্রাম ট্রাকের ওভারলোডিংয়ে এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনের বেশকিছু সড়কের ব্লক ভেঙ্গে গেছে। সড়কে যত্রতত্র বালু ফেলার কারণে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের মুখগুলো মাটিতে ঢাকা পড়েছে। অপরদিকে মধ্য উমপাড়ায় কাপড়ের কারখানা সংলগ্ন রাসেলের মালিকানা ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে। ড্রেজার ২টির দীর্ঘ পাইপ লাইনগুলো মধ্য উমপাড়ার আলাউদ্দিনের বাড়ি ও স্থানীয় জামে মসজিদ রাস্তার ওপর দিয়ে এমনভাবে নেওয়া হয়েছে এতে মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ড্রেজার ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের হুমকি ধমকির সামনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বসতবাড়ি কিংবা রাস্তার ওপর দিয়ে যেভাবে পাইপ লাইন নেওয়া হয়েছে এতে মানুষ চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছেন। দেখার যেন কেউ নেই!
অপর একটি সূত্র জানায়, রাস্তার ক্ষতিসাধন করায় ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এসব ড্রেজার ব্যবসায়ী ও মাটিখেকোদের হাত থেকে ফসলি জমি, জলাশয় ও সরকারি রাস্তাঘাট রক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টজনদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। অভিযুক্ত মো. রাসেল হাওলাদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন হলো ড্রেজার বসিয়ে ভরাট কাজ করছি। অন্যরা ব্যবসা করছে তাই আমিও করছি। রাস্তার ওপর দিয়ে পাইপ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলে না।
অপর ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. মফিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন, মধ্য উমপাড়ায় একটি জায়গা ভরাট করছি। রাস্তা ছিদ্র করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবী করে বলেন, আমি রাস্তা ছিদ্র করিনি। এভাবে কৃষিজমি কিংবা জলাশয় ভারাটের পারমিশন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম লিপটনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড্রেজারের কারণে আমার এলাকার সকল রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে না করা শর্তেও শুনছেন না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।