নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মামা-ভাগিনার অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্যে ভরাট হচ্ছে কৃষিজমি ও জলাশয়। উপজেলার বাড়ৈগাঁও-কর্কটপাড়া-পশ্চিম নওপাড়া সড়কের পশ্চিম নওপাড়া বিস্তীর্ণ জমি ভরাট করা হচ্ছে। আটপাড়া এলাকার বাড়ৈগাঁও গ্রামের খলিল ও কুকুটিয়া এলাকার পশ্চিম নওপাড়া গ্রামের আলমগীরের (সম্পর্কে মামা-ভাগিনা) নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি ড্রেজারের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা অবৈধভাবে এসব ড্রেজার সংযোগের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ভরাট কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। এতে ফসলি জমি-জলাশয় ভরাটের পাশাপাশি কাটা হচ্ছে বিভিন্ন কৃষিজমি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আটপাড়ার কর্কটপাড়া-পশ্চিম নওপাড়া সড়কের পাশে পশ্চিম নওপাড়া চকের কৃষিজমি কেটে সড়কের পাশে প্রায় ৫ একর জমি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া একই সড়কের পশ্চিম নওপাড়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ড্রেজারের দীর্ঘ লাইন টানা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, সরকারের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে ড্রেজারে পাইপ লাইনের সংযোগ দিয়ে সরকারি রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। ড্রেজার লাগিয়ে দিনের পর দিন ভরাট করা হচ্ছে কৃষিজমি ও জলাশয়। অপরদিকে এসব ভরাট কাজে কাটিং ড্রেজার লাগিয়ে অসংখ্য ফসলি জমি উজাড় করা হচ্ছে। এতে আশপাশের কৃষিজমি ভেঙ্গে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ীদের ভয়ে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না। মামা খলিল ও ভাগিনা আলমগীর পশ্চিম নওপাড়া, আটপাড়া তিনটেক, পাড়াগাঁও চক, কর্কটপাড়া চকের জমি ড্রেজারে কেটে অন্যান্য কৃষিজমি ভরাট করছেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, বিনা অনুমতিতে যেভাবে জমি কেটে কিংবা ভরাট করে এসব জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে তাতে কিছুদিন পর স্থানীয় ভূমি অফিসের রেকর্ডের এসব জমির কোন মিল পাওয়া যাবে না। জানা গেছে, মাটিখেকো মো. আলমগীর হোসেন গেল জুন মাসের প্রথমদিকে চকে বর্ষার পানি আসার আগে স্ক্যাভেটর আনা-নেওয়া করে বাড়ৈগাঁও-কর্কটপাড়া-পশ্চিম নওপাড়া পাকা সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতিসাধন করে। তার কিছুদিন পর ওই এলাকায় স্ক্যাভেটর (ভেঁকু মেশিন) দিয়ে ফসলি জমি কাটার অভিযোগে কুকুটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী মো. আসলাম ড্রেজার সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্টদের কাজ বন্ধ রাখতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আসলাম শ্রীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিছুদিন পর কুকুটিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নওপাড়া এলাকায় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আলমগীরের দুুটি ড্রেজার উচ্ছেদ করে। এছাড়া ফসলি জমি কাটার অপরাধে অভিযুক্ত আলমগীরকে ১ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়। তারপরেও আলমগীর ও তার মামা খলিলের অবৈধ ভরাট বাণিজ্য থেমে থাকেনি।
সুশীল মহল জানান, দেশের প্রচলিত আইনে বলা আছে ১৮ ‘ক’ এর অনুচ্ছেদে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’র বিধান অনুযায়ী খাল-বিল, নদী-পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ীরা ভরাট বাণিজ্য চালিয়েই যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ছাড়পত্রবিহীন ড্রেজার উচ্ছেদ, মাটি কাটার যন্ত্র (ভেঁকু) জব্দ করার পাশাপাশি জরিমানা করলেও সুযোগ বুঝে এসব ভরাট বাণিজ্য ফের চালু হচ্ছে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. খলিলের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পশ্চিম নওপাড়া-কর্কটপাড়া সড়কের পাশে ভাগিনা আলমগীরের ড্রেজার চলছে। পশ্চিম নওপাড়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ড্রেজারের লাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটির লাইন খুলে এখানে আনা হচ্ছে। পশ্চিম নওপাড়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির পাশে সামান্য উত্তর দিকে কাটিং ড্রেজারে কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ড্রেজার পাড়াগাঁও চকে চলছে।
এ বিষয়ে মো. আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন জমি ভরাট কাজে তার দুটি ড্রেজার চলছে।
কুকুটিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।