নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে একটি সরকারি রাস্তার কাজে বাধা প্রদান করে চাঁদা দাবীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের চারিপাড়া ৯নং ওয়ার্ড এলাকার রাজা পাঠানের বাড়ি থেকে ছমির পাঠানের বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ ফিট রাস্তা নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভাগ্যকুল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম পাঠানের বিরুদ্ধে। আবুল কালাম পাঠান চারিপাড়া এলাকার মৃত রহমান পাঠানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে রাস্তার কাজে বাঁধা প্রদান করে চাঁদা দাবিরও অভিযোগ করেন এক ইউপি সদস্য। এছাড়াও আবুল কালাম পাঠানের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা সংস্কারের নামে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা তোলারও অভিযোগ রয়েছে। ভাগ্যকুল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মন্টু খান অভিযোগ করে বলেন, গত ১ জুন মঙ্গলবার ও ৪ জুন শুক্রবার সরকারি রাস্তার কাজ করানোর জন্য মাটিকাটা শ্রমিক ভাড়া করেন তিনি। পরপর দুইবার শ্রমিকদের দিয়ে রাস্তার কাজ করানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম পাঠান ও তার ছোট ভাই রুবেল পাঠান কাজে বাঁধা প্রদান করেন এবং সেসময় কালাম পাঠান বলেন, এ রাস্তার কাজ করানোর জন্য তিনি জেলা পরিষদের সদস্য মনির হোসেন মিটুলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ও প্রকৌশলীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছেন। এখন তাকে একলক্ষ টাকা না দিলে সে রাস্তার কাজ করতে দিবে না। আবুল কালাম পাঠান সরকারি রাস্তার কাজ করানোর জন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে ২,০০০ টাকা করে তুলেছেন বলেও জানান ইউপি সদস্য মন্টু খান। এ বিষয়ে আবুল কালাম পাঠান বলেন, আমি জেলা পরিষদের কাজ আনার জন্য জেলা পরিষদের সদস্য মনির হোসেন মিটুলকে টাকা দিয়েছি। আমার টাকা খরচ হয়েছে। আমি টাকা না পেলে এ কাজ করতে দিবো না। রাস্তা সংস্কারের নামে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে কালাম পাঠান বলেন, আমি টাকা তুলেছি রাস্তার কাজ করানোর জন্য। কালাম পাঠান রাস্তার কাজ করানোর জন্য টাকা তোলার কে এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মনির হোসেন মিটুল বলেন, এ রাস্তার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। কালাম যা বলেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য কাবিখা সাধারণ উন্নয়ন খাতে রাজা পাঠানের বাড়ি থেকে ছমির পাঠানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ৩,২৯,৬৪০ টাকার বরাদ্দ দেয় ভাগ্যকুল ইউনিয়ন পরিষদ। ভাগ্যকুল ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত অর্থে রাস্তার কাজ করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য মন্টু খান। সেখানে বাঁধা প্রদান করে চাঁদা দাবি করে আবুল কালাম পাঠান। তাই রাস্তার কাজটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এদিকে আবুল কালাম পাঠান এর আগে ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেছেন। তিনি জেলা পরিষদের মাধ্যমে কাজটি করানোর জন্য চেষ্টা করছেন। হঠাৎ ইউনিয়ন পরিষদের এমন বরাদ্দে ঈর্ষান্বিত হয়ে তিনি মন্টু খানের কাছে চাঁদা দাবি করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ভাগ্যকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মনোয়ার হোসেন শাহাদাৎ জানান, কালাম জেলা পরিষদের সদস্যকে যে টাকা দেয়ার বিষয়টি বলেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি জেলা পরিষদের সদস্য মনির হোসেন মিটুল ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে বলেছে এটা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। কালাম এটা মিথ্যা বলেছে। চেয়ারম্যান শাহাদাৎ আরো জানান, রাজা পাঠানের বাড়ি থেকে ছমির পাঠানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় এর আগেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। বর্ষায় ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আবারো কাবিখা সাধারণ উন্নয়ন খাতে আরেকটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে কালাম পাঠান বাঁধা প্রদান করে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। যা না দেয়ার কারণে কাজটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষকে অবগত করলে তিনি জানান, আমি খোঁজ নিয়ে যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
শ্রীনগরে সরকারি রাস্তার কাজে বাধা, চাঁদা দাবির অভিযোগ
আগের পোস্ট