নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর ও পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিনদিন এসব রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালটিতে ৯ জন ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি থাকতে দেখা গেছে। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী। এদিন হাসপাতালে প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষায় ৫/৬ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। অপরদিকে চলতি মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ১৩০ জনের অধিক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু মুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক অবস্থানে থাকার দিকনির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। এতে মশার উপদ্রব বাড়ছে। সাধারণ এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হবে এমনটা নয়। তবে ডেঙ্গু বহণকারী মশা মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গুর জীবাণু দেহে প্রবেশের শঙ্কা থাকে। মাঝারি আকৃতির সাদা ডোরাকাটা বিষাক্ত এই মশাটি খালি চোখে খুব একটা দেখা যায় না। মশাটি দিনের আলোতে মানুষের দেহে কামড়ায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্তপান করে সুস্থ কারও দেহে মশাটি কামড় দিলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের আশঙ্কা থাকে।
স্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন, ডেঙ্গু মশামুক্ত রাখতে বসতবাড়ি ও এর আশপাশে পরিত্যক্ত পুরনো টায়ার, লন্ড্রিট্যাংক, ড্রাম/ব্যারেল, ফুলের টব, মাটির গর্ত কিংবা ঢাকনাবিহীন যেকোন ধাতব/তৈজসপত্রে জমে থাকা পানি রাখা যাবেনা। ঝোপঝাড়-জঙ্গল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোনভাবেই এসব স্থানে যেন বৃষ্টির পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে এসব স্থানে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে সাধারণ এডিস মশা ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করবে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রবণতা বাড়বে। মশা তাড়াতে স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের জন্য জমে থাকা পানিতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, বৃদ্ধ, শিশুসহ অসংখ্য রোগী ভিড় করছেন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন বেড খালি নেই। হাসপাতালের বারান্দায় ফ্লোরে বেড পেতে বেশকিছু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডেই ২৪ ঘন্টা মশারি সাঁটিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবিকা জানান, এখানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ১৩০ জন ডেঙ্গু রোগী এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও এসকে পাল জানান, ডেঙ্গু ও পানিবাহিত রোগীর চাপ বাড়ছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখানে এ পর্যন্ত কোন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।