নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমোদন ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ নিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে লাইসেন্সবিহীন বেশ কয়েকটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান। এতে করে বছরে কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বর্তমানে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৫-১৬টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সবগুলোই অবৈধ। সেসব প্রতিষ্ঠানের নেই বৈধ কোন অনুমোদনসহ বৈধ কোন কাগজপত্র। এছাড়া বৈধ নামধারী প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা করে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অবৈধ ইন্টারনেটের বিষয়টি সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিকদের নজরে এলেও দৃষ্টিগোচর হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ পুলিশ প্রশাসনের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ইন্টারনেটের ব্যবসা করার জন্য “আলভি অনলাইন” নামে একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার একটি আইএসপি কোম্পানি থেকে একটি ওয়ান ইউজার সংযোগ কিনে নেয় এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ব্যবসা করার অনুমতি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা ছাড়া অন্য কোন উপজেলায় ইন্টারনেটের সংযোগ দেওয়ার অনুমতি না থাকলেও আলভি অনলাইনের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ সেলিম তার নিজের আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে কেরানীগঞ্জ উপজেলাসহ মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলা ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রায় শতাধিক সংযোগ প্রদান করেছেন। যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনটিটিএনের মাধ্যম ছাড়া ওভারহেড তারের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু আলভি অনলাইনের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ সেলিম কেরানীগঞ্জের জাজিরা থেকে বালুচর ব্রীজ ও কুচিয়ামোড়া ব্রীজ হয়ে ওভারহেড তারের মাধ্যমে অবৈধভাবে সিরাজদিখান উপজেলায় ১৫-১৬ জনকে ইন্টারনেটের সংযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে স্কাই নেট ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ও সায়েম অনলাইন কমিউনিকেশন নামে এ দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত বাকি সবকটি অবৈধ। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ঘুরে সেসব ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের আইপি এড্রেস সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখা যায় সবকটি আইপি এড্রেসই এক। যেটি আলভি অনলাইন নামে নিবন্ধিত। উপজেলার অবৈধ নেট ব্যবসায়ীরা একটি আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে উপজেলার অসংখ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংযোগ প্রদান করার ফলে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর আলাদা আলাদা আইপি অ্যাড্রেস থাকে না। সেসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা অবৈধ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ, ভূঁয়া ফেসবুক একাউন্ট খুলে নানা অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। একই আইপি একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করার কারণে অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কয়েক দফা অবৈধ সাইবার ক্যাফেসহ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ ইন্টারনেটের ব্যবসা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান অনুযায়ী সাইবার ক্যাফে পরিচালনা, ইন্টারনেট সেবা প্রদানসহ যেকোন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য কমিশন হতে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়া টেলিযোগাযোগ আইনের ৩৫ ধারার বিধান অনুযায়ী, লাইসেন্স ব্যতীত টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ সেবা প্রদান করা একটি অপরাধ। এ আইনে অনধিক ১০ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় করার বিধান রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ আইন কতটুকু প্রয়োগ হচ্ছে তা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে ? সিরাজদিখান উপজেলার অবৈধ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যবসার লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। এদের মধ্যে কেউ কেউ লাইসেন্স পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। স্কাই নেট ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক এর স্বত্ত্বাধিকারী সুব্রত বিশ্বাস বলেন, আমরা এনটিটিএনের মাধ্যমে যে সংযোগটি এনেছি সেটির এনটিটিএন কস্ট ও বিটিআরসির নিয়ম-কানুন এবং ভ্যাট ট্যাক্স সঠিকভাবে প্রদান করার পর বৈধভাবে আমরা গ্রহীতাদের ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অবৈধভাবে যারা ইন্টারনেটের ব্যবসা করছে তারা সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ব্যাপারে আলভি অনলাইনের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ সেলিম বলেন, আপনি যেগুলো অবৈধ লাইন বলছেন সেগুলো আমার না। অন্য কারো হবে। আমি অবৈধ ব্যবসা করি না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম জানান, খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।