নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতক শিশুকে হারানো মা মাহবুবা রহমান আঁখিকেও বাঁচানো গেল না। রোববার বেলা আড়াইটার কিছু আগে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।
তিনি বলেন, “একটু আগে আঁখি মারা গেছে। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।”
অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্ম দিতে নিজের ইচ্ছের কথা স্বামীকে জানিয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মাহবুবা রহমান আঁখি। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে নিয়মিত ওই চিকিৎসকের কাছেই তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রসব ব্যথা উঠলে গত ৯ জুন মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখিকে নিয়ে আসেন তার পরিবার। ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, সেদিন তাদের বলা হয়েছিল ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে আছেন। কিন্তু সেদিন ওই চিকিৎসকের সহকারীরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। সেসময় জটিলতা তৈরি হলে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটি ওইদিনই মারা যায়। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আঁখিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। ল্যাবএইডে ভর্তির পরও আঁখির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না বলে জানিয়েছিলেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।
ওই ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন ইয়াকুব। বৃহস্পতিবার ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। ওইদিনই তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত। এছাড়া ওই দুই চিকিৎসক-কর্মচারীসহ ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আইসিইউ ও জরুরী সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম শুক্রবার বন্ধ করে দিয়েছে।
ওই হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ওই হাসপাতালে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলে নির্দেশনা এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
আঁখির চাচাতো ভাই শামীম বলেন, রোববারই আঁখির মরদেহ কুমিল্লায় নিয়ে যাবেন তারা। “লাকসামে আমাদের বাড়িতে দাফন করা হবে। আঁখিকে আট মাসের রেখে আমার চাচা মারা গিয়েছিলেন। চাচী আর বিয়ে করেননি, সে আমাদের সবার খুব আদরের ছিল।”
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন
আগের পোস্ট