নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১৭ আগস্ট ভয়াল সিরিজ বোমা হামলায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার বিস্মৃতির কালো দিন। সেই বীভৎস বর্বরোচিত ঘটনার কথা স্মরণে আসলে দেশবাসীর হৃদয়-মন আজও শিহরিত হয়ে ওঠে। ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্টের কুশিলব ও পৃষ্ঠপোষকরা আর যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবস্থান করতে না পারে সেজন্য প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক শান্তিকামী মানুষের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, আজ ১৭ আগস্ট ভয়াল সিরিজ বোমা হামলায় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার বিস্মৃতির কালো দিন। বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’ (জেএমবি)। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে সংঘটিত পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলার এক বছর ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী।
তিনি বলেন, ১৭ আগস্ট দেশের ৩০০ স্থানে মাত্র আধাঘণ্টার ব্যবধানে একযোগে ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও দুই শতাধিক লোক আহত হয়। হামলা চালানো হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে। হামলার স্থানগুলোতে জেএমবির লিফলেট পাওয়া যায়। বোমা বিস্ফোরণে নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ ও আহত মানুষের কান্না-আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে দেশ। এ ঘটনায় দেশবাসীর মনে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টির বিরুদ্ধে ফুসে ওঠে বাংলার জনগণ। সেসময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, জঙ্গিবাদের শীর্ষনেতা জেএমবির বাংলা ভাইকে রক্ষা করতে তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল- বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। সে সময়কার দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, বগুড়ায় বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার, ঢাকার কুড়িলে রকেট লাঞ্চার উদ্ধারসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য অস্ত্র মজুদের তৎপরতায় এক আতঙ্কিত জনপদে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামাত শাসনামলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক অর্থনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়া যখন এই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির লেলিয়ে দেওয়া পাষন্ডদের দ্বারা কাপুরুষোচিত গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন। তখন তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য একটি হেলিকপ্টার চেয়েও তার কাছ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার, জনগণের নন্দিত নেতা মমতাজ উদ্দিন, অজাতশত্রু মানুষ মঞ্জুরুল ইমামসহ হাজার হাজার গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মানুষকে হত্যা করেছেন। শিশু-কিশোরী পূর্ণিমা, ফাহিমা, রজুফাসহ হাজার হাজার ধর্ষিতার কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ভোলার লালমোহন-তজুমদ্দিন, বরিশালের গৌরনদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাকে মৃত্যুপুরী বিভীষিকা ও রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছিল তারা। বাংলা ভাই ও মুফতি হান্নান, আব্দুর রহমানসহ জঙ্গি নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে প্রগতিশীল মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের অঙ্গীকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেই বন্ধনকে অটুট রাখতে হবে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড ও আদালত কর্তৃক দন্ডিত আসামী তারেক রহমানের মতো সন্ত্রাসবাদী মানুষ আর যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ না পায় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। সকল ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।