নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী নেতৃত্বে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ ও চেতনার ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে। ২১ আগস্টের মতো বিএনপি-জামাতের রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও খুনি তারেক রহমানের সেই ভয়াবহ মাফিয়াতন্ত্রের যুগে আর ফিরে যাবে না বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। তৎকালীন বিএনপি-জামাত অশুভ জোট সরকারের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের ষড়যন্ত্রে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। সেদিন মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের দানবীয় উন্মত্ততায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শান্তি সমাবেশ রক্তাক্ত হয়েছিল। ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল সভ্যতা-মানবতা। সেই বীভৎস বর্বরোচিত ঘটনার কথা স্মরণে আসলে দেশবাসীর হৃদয়, মন আজও শিহরিত হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামাত অশুভ জোটের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেন। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। আহত হন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনও স্পিøন্টারের আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করতে সংগঠনের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতকচক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তাঁর শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং এখনও যারা স্পিøন্টারের আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সেদিন বিএনপি-জামাত জোট সরকার হত্যাকারীদের হামলা করা থেকে শুরু করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যেতে সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে। বোধগম্য কারণেই বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে এই মামলার সঠিক তদন্ত হয়নি, বরং ষড়যন্ত্রের হোতাদের রক্ষার উদ্দেশ্যে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং আলামত ধ্বংস করার নানাবিধ ষড়যন্ত্র হয়েছে। ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে এহেন কোন হীন কাজ নেই যা তারা করেননি। যে হাওয়া ভবনে বসে হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানদের নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই হাওয়া ভবনে বসেই তখন জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে দীর্ঘ সুনিবিড় তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই নির্মম গণহত্যার সাথে কারা জড়িত ছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামীদের জবানবন্দিতে উঠে আসে কীভাবে সন্ত্রাসের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গ্রেনেড হামলা সংঘটিত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে আদালত গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রদান করেছে। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানসহ অন্যান্য আসামীদের দন্ড প্রদান করেছে। এই গণহত্যার সাথে জড়িত খুনি তারেকসহ যেসব আসামী বিদেশে পালিয়ে আছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে দন্ড কার্যকর করতে হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে এ ধরনের গণহত্যা সংঘটিত হতে পারে তা কোন সভ্য মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। অথচ বিএনপি-জামাত অশুভ জোট সেই কাজটিই ২১ আগস্টে সংঘটিত করেছিল। এদেশের মানুষ আর সেই দুর্নীতিবাজ-অর্থপাচারকারী সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টার মাইন্ড, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, মুম্বাইয়ের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, আদালতে এফবিআইয়ে’র সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান ও বিএনপিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বে দেখতে চায় না। বাংলার জনগণ অন্ধকারের শক্তিÑ মানবতাবিরোধী বিএনপি-জামাত অপশক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।