নিজস্ব প্রতিবেদক
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ এনে নুর ইসলাম নামে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ ও সালমা বেগম নামে ৪৬ বছরের এক বিধবাকে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের পূর্ব শিয়ালদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নুর ইসলাম পূর্ব শিয়ালদী গ্রামের মৃত সাইজদ্দিন শেখের ছেলে এবং সালমা বেগম একই গ্রামের মৃত মালেক এর স্ত্রী। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। পরে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদারের জিম্মায় তাদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পরদিন পরকীয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত সালমা বেগম গ্রাম থেকে উধাও হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, পূর্ব শিয়ালদী গ্রামে সালমা (৪৬) তার স্বামীর বাড়ীতে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। আনুমানিক ৫ বছর পূর্বে সালমার স্বামী মারা যায়। এরপর তিনি একে একে তার মেয়েদেরও বিয়ে দেন। বাড়ীতে বেশীরভাগ সময় তিনি একাই থাকেন। সেই সুবাদে নুর ইসলামের সাথে সালমা বেগমের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এলাকাবাসী আরো জানায়, এর আগেও একাধিকবার পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে তাদের দুজনকে আটক করা হয়। এ নিয়ে গ্রাম্য সালিশসহ মামলা মোকদ্দমাও হয়েছিলো।
গোপন সূত্রে জানা যায়, সালমা বেগম তার বাড়ীতে একা থাকার সুবাদে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী লম্পটের কুনজরে পড়েন। সালমা বেগমের কাছে পাত্তা না পেয়ে তার ক্ষতি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। এছাড়া ওইদিন ঘটনার আগে এবং পরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নেতৃত্বে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ এনে তাদের দুইজনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয় বলেও জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক বলেন, কেউ যদি পরকীয়া করতে আসে তাহলে সন্ধ্যা ৭টার সময় কেন আসবে? সেতো গভীর রাতেও আসতে পারতো। কার ইশারায় বারবার এমন ঘটনা সৃজন করা হয়? কি স্বার্থে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে এলাকাবাসীকে উস্কানি দিয়ে মানুষের উপর নির্যাতন চালানো হয়? ঘটনার সাথে কে কে জড়িত এবং ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য সাংবাদিকদের খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় ও গোপনভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সেইসব লম্পটদের নাম বেরিয়ে আসবে।
সিরাজদিখান থানার এএসআই মোঃ মালেক জানান, তাদের দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে ওসি স্যারের নির্দেশে চেয়ারম্যানের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফরিদ উদ্দিন জানান, কোন পক্ষই আমাকে কোন অভিযোগ জানায়নি। অভিযোগ করলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন হাওলাদার জানান, মেয়েটি পলাতক আছে। তাকে পাওয়া গেলে দুইপক্ষ নিয়ে বসে একটা মীমাংসা করে দিব।